হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.)

মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোছাইনী | মঙ্গলবার , ১১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (দ.) তাঁর হাদিসে পাকে নবুওয়াতের জবানে ঘোষণা করেন, প্রতিটি মানুষ তার ফিতরাতের উপর ভূমিষ্ট হয়। কিন্তু ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর মাতা-পিতা তাকে যে দিকে নিয়ে চলে, যে ধর্মে দীক্ষিত করে, সে ঐ বিষয়েরই অনুসারী হয়ে যায়। যে যেখানেই থাকি না কেন, জানার ইচ্ছা হল, কেন আমরা এ ধরাধামে আসলাম, কে পাঠাল বা কেন পাঠাল এর উত্তরে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন বলেন ইন্নি জায়িনুল ফিল আরদি-খালিফা অর্থ-নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করব। এ প্রতিনিধি কি আমরা? আল্লাহ্‌ বলছেন, ‘আল ইনসানু সিররী ওয়া আনা সিররাহু’-মানুষ আমার রহস্য এবং আমি মানুষের রহস্য। বুঝা গেল, মানুষ নামক জাতিই আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি। কিন্তু আমার শৈশব কিশোর তারুণ্য সব কিছুই তো আমি পারিবারিক বা সামাজিকভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে উপলব্ধি করছি। কোথায় পাব সে খেলাফত তথা প্রতিনিধিত্বের স্বাদ? কে দেখাবে সে পথ? কোন স্থানে পাব এ বিষয়ের সুরাহা? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ বলে দিলেন, ‘ওয়াত্তাবি সাবিলা মান আনাবা ইয়াইয়্যা’ যারা আমার নৈকট্য অর্জন করেছে তাদের অনুসরণ কর। নৈতিক অবক্ষয়ের এ যুগে অনুসরণীয় অনুকরণীয় এক মহা নেয়ামতের নাত হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.)।
এ মহান অলি ইয়েমেন থেকে স্থল পথে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর লাহোর দিল্লী গৌড় হয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার তদানীন্তন ‘ইল্লা’ নামক স্থানে ডিঙ্গি নৌকা থেকে অবতরণ করেন। ঐ স্থানে কিছুকাল অবস্থান করে পরিবর্তীতে ধলই গ্রামে উপস্থিত হন। উল্লেখ্য, যে ‘ইল্লা’ নামক স্থানটি হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.)-এর বরকতপূর্ণ। পদার্পণ করে নিজ পবিত্র জবানে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌ কালেমা উচ্চারণ করে মাটিতে স্বীয় হস্তস্থিত লাঠি স্থাপন করেন। তাঁর জবানে উচ্চারিত কালেমার সূত্র ধরে ঐ স্থানটি লোকমুখে ‘ইল্লা’ নামে প্রচারিত হয়।
অলিয়ে কামেলগণ এর নজর মহান আল্লাহ্‌র দয়ায় সাধারণ মানুষের ধারণার অতীত। তাঁরা শুধু মানুষ নন, ফয়েজ বরকত বিতরণে সকল সৃষ্টি আবৃত করেন। সূফিয়ায়ে কেরামের দৃষ্টিতে কামেল পীরের নজর সকল আশেকীনদের উপর সমানভাবে বিস্তৃত যেভাবে গাউসে পাক জিলানী একই সময়ে বহু ভক্তের বাসগৃহে দাওয়াত এর তাবারুক গ্রহণ করেছেন। গাউছে পাক মাইজভাণ্ডারী একই সময়ে দরবার শরীফ ও মক্কা শরীফে হজ্ব করেছেন। বিষয় হল তাদের নজরে সবাই নজরবন্দি হিসেবে বাস করে এ নজরবন্দিতে অনেকেই আবার কলবে খোদার প্রেমের জিকির সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। এসব কিছু আউলিয়ায়ে কিরামের শান। এক মহিলার মুরগি বাচ্চা দেবার পর তিনি মানত করেছেন সে বাচ্চা দুটি বড় হলে একটি বায়েজিদ বোস্তামীর (রহ.) দরগাহ ও অন্যটি হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রাঃ)-এর মাজারে দেবে। বাচ্চা বড় হল। মহিলা মানত পূরণের উদ্দেশ্যে জবাই করার জন্য একটি মুরগি ধরে। কিন্তু মুরগির মুখে এমন আওয়াজ বের হচ্ছে যা হুবহু ‘আল্লাহু’ ধ্বনির মত (হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.) ইতিহাস ও ঐতিহ্য) সুবহানাল্লাহ্‌! অলিদের ফয়েজ গৃহ পালিত পশু পাখির উপরও সমভাবে বিরাজমান। অলিদের রওজা, মাজার শরীফ দেখলে আল্লাহ্‌র ভয় ও স্মরণ হয় বলে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। বস্তুত হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.)-এর মাজার শরীফে নীরবে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করলে অনুভব করা যাবে, আল্লাহ্‌র অলির রওজার সব কিছু আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ জিকিরে মগ্ন। ২০১২ সালের মিলাদুন্নবী (দ.)-এর মাসে আমি প্রথম এ মাজার শরীফ জিয়ারত করি। রওজা পাকের ভিতর যখন প্রবেশ করলাম আমার শরীরের লোমগুলো শিহরিত হয়ে উঠলো। স্রষ্টার জিকিরের অনুভব করলাম। বস্তুত স্রষ্টার স্মরণ হয় যেসব মহান অলিদের মাজারে পাকে যারা জিন্দা ও সর্বদা জিকিরে ইলাহিতে মগ্ন।
রোগ মুক্তি বিপদ থেকে উদ্ধার এসব কিছু তো নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার। হযরত শাহজাহান শাহ্‌’র (রা.) এ দরবার আধ্যাত্মিক প্রশাসন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। অলিরা যেমন মুশকিল কোশা তেমনি মানবের কলবে খোদায়ী সেই প্রতিনিধিত্বের প্রভাব বিস্তারকারী স্থানে কলবে নেয়ামত দিয়ে পূর্ণ করে দেন এ সকল আউলিয়ায়ে কিরাম। প্রিয় পাঠক, একটু নিজেকে হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.)-এর ফয়েজে মগ্ন রেখে ভেবে দেখুন, তার জীবন চলা আর আমাদের জীবন চলার মধ্যে কত তফাৎ তিনি তার পরিবার পরিজন ছেড়ে মানবকে স্রষ্টার প্রেম রসে আসক্ত করার তরে এ অঞ্চলে আসেন। দীর্ঘ ৫০০ বছর ধরে তার রহমতের স্রোতধারা অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য যে, আমরা যদি তার আদর্শ অনুসরণ করি, তবে আমরাও তার ফয়েজে ভরপুর হয়ে ইনসানে কামেল হতে পারব। এ জন্য আমরা দুনিয়াবী মাকছুদের চেয়ে যদি খোদা তালাশী হই তাহলে বেশি ফলদায়ক হবে। ধলই হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.)-এর আজমত এর সাথে যোগ হয়েছে গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী ও গাউসুল আজম বাবা ভাণ্ডারী, বিশ্বঅলি শাহানশাহ্‌ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)-এর মতো অলিয়ে কামেলের নেক নজর। এ নজরে হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.)-এর গুরুত্ব মানুষের কাছে বহুগুণে রহমতের একটি ফোয়ারা যার কাছে মানুষ খুঁজে পায় সেই ‘আলাসতু বিরাব্বিকুম কালু বা-লা’ এর দিক নির্দেশনা। তাই বলা চলে যে, হযরত শাহজাহান শাহ্‌ (রা.) সৃষ্টির কলবে স্রষ্টার জিকির পয়দাকারী এক নাম। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে এ মহান অলির নেগাহ করুণা গ্রহণে আমাদের অন্তরাত্মা পরিশুদ্ধ করার তৌফিক দান করুন। আমিন!

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য
পরবর্তী নিবন্ধহযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)-এর সাথে সাক্ষাৎ ও স্মৃতিকথা