রুপালি ইলিশ মাছের স্বাদ, আকৃতি ও দাম নিয়মিত আলোচনার বিষয়। বিশেষ করে বৃষ্টির মৌসুম ও দুর্গা পূজার সময়। ক্রেতারা বলছেন, প্রিয় মাছটি আগের চেয়ে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। ইলিশের ভরা মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। পাঁচশ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। গত বছর একই সময় একই আকৃতির ইলিশের দাম ছিল সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। ১২শ থেকে ১৪শ টাকার বেশি পড়ছে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম। এমন তথ্য দিচ্ছে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। খবর বিবিসি বাংলার।
অনাবৃষ্টি ও নিম্নচাপ : এ বছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলেরা ধারণা করেছিলেন এবার তারা খুব একটা মাছ পাবেন না। তবে জুলাইয়ের শেষে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর মৌসুমের শুরুতে অনেক বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে বলে খবর আসছিল। কিন্তু পরের দিকে চিত্র কিছুটা বদলে গেছে বলে ধারণা দিয়েছেন চাঁদপুরভিত্তিক আড়তদাররা।
এক আড়ত-মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন খান বলেন, সাধারণত জোয়ারের সময় ইলিশ মাছ বেশি পাওয়া যায়। এ বছর যখন জোয়ারের সময় এসেছে তখন সমুদ্রে একবার করে নিম্নচাপ হয়েছে। সে সময় সিগন্যালের কারণে জেলেরা মাছ ধরা ট্রলার নিয়ে যেতে পারেনি। মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে বেশ কয়েকবার এটা হয়েছে। সেই কারণে যখন মাছ ধরা সম্ভব হয়েছে তখন দাম একটু বেশি হয়েছে। এছাড়া মৌসুমের একটা বড় সময় এ বছর কম বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে চাঁদপুর ও তার আশপাশে নদীতে পানির প্রবাহ কম ছিল। যার ফলে প্রজননের জন্য ইলিশ মাছ সমুদ্র থেকে বিচরণ ক্ষেত্র পর্যন্ত পর্যাপ্ত সংখ্যায় পৌঁছাতে পারেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইলিশ মাছ নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের বলেন, ইলিশ মাছের প্রজননে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। আমরা ইলিশ সংরক্ষণে নদীতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছি, তাতে অনেক লাভও হয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইলিশের জন্য একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইলিশ মাছ এখন ভিন্ন রকম পরিবেশ পাচ্ছে, যা তারা আগে পেত না। কয়েক দিন পরপর যে নিম্নচাপ হচ্ছে তাতে পানির বিক্রিয়া, মিষ্টি পানির প্রবাহ, পানির তাপমাত্রায় পরিবর্তন, পানিতে তাদের যে খাবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এগুলোতে একটু একটু করে পরিবর্তন হচ্ছে। এতে তার প্রজনন প্রভাবিত হচ্ছে।
ড্রেজিং ও বিচরণ ক্ষেত্রের ক্ষতি : জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, শরিয়তপুরের রাতাবুনিয়া থেকে সুরেশ্বর ইলিশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে কিছুদিন ধরে নদীতে বালু উত্তোলনে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং চলছে। মাছের জন্য জায়গাটা নিরাপদ নেই। তাই সেখানে মাছ কম। ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র নিরাপদ করতে চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
জ্বালানি তেলের দাম : জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মাছ ধরার খরচ বেশ বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মাছ ধরা ট্রলারের খরচ ছাড়াও বেড়েছে ইলিশ মাছের পরিবহন খরচ। এর প্রভাব পড়েছে ইলিশের দামে।
ফেসবুকে বিক্রি : ফেসবুকে বিক্রির কারণে ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বেড়েছে দাম।