চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন করার ভিডিও যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আজ বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমদ ভুঞা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) এই নির্দেশ দেন। এই মামলার এক আসামি নূর হোসেন শাওন জামিন আবেদন করলে তাও নামঞ্জুর করেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে কয়েকজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২০ জুলাই ওই শিক্ষার্থী হাটহাজারী থানায় মামলা করেন।
এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে ২২ জুলাই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে চারজন এবং ২৩ জুলাই বহদ্দারহাট এলাকা একজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী আদালতে কাঠগড়ায় থাকা আসামি নূর হোসেন শাওনকে শনাক্ত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আদালতে বলেন, “ভিকটিম যা বলেছেন তার বাইরেও ঘটনা আছে। আসামিরা তাকে যৌন নিপীড়ন করেছে। এমনকি ভিডিও ধারণ করেছে। এখন আমরা আশঙ্কায় আছি, ওই ভিডিওচিত্র যদি কোনোভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ছাত্রীর সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
তখন বিচারক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার এসআই মিজানুর রহমানের উদ্দেশে বলেন, “কোনোভাবেই যাতে ভিডিওচিত্রটি ছড়িয়ে না পড়ে সেই বিষয়ে আপনারা পদক্ষেপ নিন। প্রয়োজনে সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থার সহায়তা নিন।”
এসময় জেলা পিপি ইফতেখার সাইমুল ভিডিওচিত্র ধারণ করায় এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা আইনেও অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শুনানি শেষে ইফতেখার সাইমুল বলেন, “সাইবার ক্রাইমের ধারা মামলায় সংযোজনের জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আবেদন করতে বাদী পক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।”
এর আগে আদালতে শুনানিতে হাজির হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভুঁইয়া ও সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়া।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে- আদালতের জিজ্ঞাসায় তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য তিনজনসহ ৫ আসামিকেই ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে আদালত।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো মোহাম্মদ আজিম (২৩), নুরুল আবছার বাবু (২২), নূর হোসেন শাওন (২২), মাসুদ রানা (২২) ও সাইফুল ইসলাম (২৪)।
শুনানি শেষে শাওনের আইনজীবী অসীম কর্মকার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। নির্দোষ কেউ যেন সাজা না পায়। এজাহারে তাইমুর নামের একজনের নাম ছিল যে ঘটনার সময় সেখানে ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না, সেটা আমরা শুনানিতে জানতে চেয়েছি। সে কি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কি না? রাতে সে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকতে পারে কি না? আদালত বলেছে, তা তদন্তে আসবে।”