শিশু যখন মারাত্মক অনুষ্টিতে (এস.এ.এম) আক্রান্ত হয়, তখন তার মৃত্যুঝুঁকি থাকে সর্বোচ্চ। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তিপূর্বক খাদ্য পুষ্টি ও অন্যান্য জটিলতার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দিতে হয়।
শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার বা স্যাম-এ আক্রান্ত বলা হয় যদি-
১. উচ্চতা অনুযায়ী তার ওজন হু. গ্রোথ চার্টের মাধ্যম রেখা থেকে -৩ জেড স্কোর নিচে অবস্থান নেয়
২. তার দেহ কংকালসার দেখাচ্ছে
৩. শরীরে পানি জমেছে বা
৪. তার মধ্যবাহুর আকার বা বেড়ের পরিমাপ ১১.৫ থেকে ১২.৪ সে. মিটারের মধ্যে।
মারাত্মক অপুষ্টির শিকার উল্লেখযোগ্য কারণ-
১. জন্মকালীন কম ওজন: যে সকল নবজাতক ২৫০০-এর কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, তারা অপুষ্টিচক্রে প্রথম থেকে ঢুকে পড়ে
২. শিশুকে ভুলভাবে খাওয়ানো: যেসব শিশু প্রথম ০৬ মাস মায়ের দুধ পায় না, তারা অপুষ্টিতে ভোগার ঝুঁকিতে থাকে।
শিশুকে যখন বোতলে-ফিডারে করে গুঁড়োদুধ খাওয়ানো হয়। এসব ক্ষেত্রে শিশু বারে বারে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া অসুখের কবলে পড়ে
ষ শিশুকে ০৬ মাস বয়স হতে বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পরিপূরক খাবার (যেমন খিচুড়ি) খাওয়ানো শুরু না করা হলে।
ষ শিশু ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হলে অনেক অভিভাবক তাকে স্বাভাবিক খাবার-দাবার বন্ধ করে দেন। তখন সাগু ও সুজি ও দুধ পাতলা করে খাওয়ান। অসুখে কোন খাবার খুব পেট গরম বা কোন খাবার পেট ঠাণ্ডা রাখে-এসব কুসংস্কার জাত ধারণার বশবর্তী হয়ে শিশুকে নানা রকম অ-খাদ্য খাওয়ান। এতে শিশু পুষ্টিবঞ্চিত হয়ে আরো বিপাকে পড়ে।
৩. নানা রকম সংক্রমণ: শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, হাম, হুপিং কাঁশ, যক্ষ্মা রোগে ভুগলে মারাত্মক অপুষ্টিতে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব অসুখে শিশুর খিদে লোপ পায়। কখনোবা অভিভাবক অসুখের সময় শিশুকে তার স্বাভাবিক সুষম খাবার খাওয়ানো বন্ধ রাখেন। অথচ অসুখের সময় শিশুর জ্বর থাকার কারণে তার এনার্জি ও রোগ প্রতিরোধে বেশি প্রোটিন যোগানোর প্রয়োজন। অসুখের সময় এসব স্বাভাবিক পুষ্টি না পেলে শিশু আরো অপুষ্টিতে পড়ে। অপুষ্টি আরও ইনফেকশানস্্ ডেকে আনে। এভাবে অপুষ্টি-সংক্রমণ-অপুষ্টি চক্র গড়ে ওঠে।
৪. গুঁড়ো দুধ খাওয়ানোর নানা রকম বিজ্ঞাপন: এসব বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত হয়ে অনেক কর্মজীবী মা শিশুকে বোতলে ফিডারে করে বাজারের কেনা দুধ তরল করে, অপরিচ্ছন্নভাবে পরিবেশন করেন। ফলে শিশু সহসা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এসবে ভুগে অপুষ্টিতে পতিত হয়।
৫. সামাজিক নানা কারণ: ঘন ঘন গর্ভধারণ, গর্ভধারণের বিরতিকাল ৩ বছরের কম হলে, শিশুকে খাওয়ানো নিয়ে ঘরে-পরিবারে নানা ধরনের কুসংস্কার, পারিবারিক অশান্তি, বিবাহ-বিচ্ছেদ এসব কারণে শিশু খাদ্য-পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়াও বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগও শিশুর যত্নে বিঘ্ন ঘটায় ও অপুষ্টি ডেকে আনে।
৬. দারিদ্রতা: দারিদ্রতার কারণে শিশুর বাসস্থান, কাপড়-চোপড়, বিনোদন সবকিছু সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠে। অভিভাবক শিশুর জন্য পুষ্টিমাণ সম্পন্ন খাবার যোগান দিতে পারেন না। শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, স্নেহ জাতীয় খাবার ও শাকসবজি, ফলমূল যোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর সাথে পুষ্টি সম্পর্কে মা-বাবার অজ্ঞানতা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।










