পাঁচ শতাধিক গ্রন্থে সমৃদ্ধ চবির বঙ্গবন্ধু কর্ণার

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিস্ময়ভরা জীবন-কর্ম নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে চলছে গবেষণা ও গ্রন্থ রচনা। এ মহান মানুষটিকে নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি অনেক রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক শত শত গ্রন্থ রচনা করেছেন। এসব গ্রন্থ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে স্থাপন করা হয়েছে সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতেই হাতের ডানে গ্রন্থাগার মিলনায়তনের পাশে চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি। ছবির নিচে তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো এদিকে বঙ্গবন্ধু কর্নার। পরিপাটি ছোট্ট এ কক্ষে রয়েছে একটি গোলটেবিল ও কয়েকটি চেয়ার। শেলফে থরে থরে সাজানো রয়েছে নানা ধরনের বই। প্রতিটি বই বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্মের নানা তথ্যে সমৃদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে প্রতিদিন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আসেন এই সংগ্রহশালায়। শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রেও রয়েছে এ কর্নার। কর্নারটি পরিচালনা করার জন্য রয়েছে সকাল-বিকাল দুই শিফটে দুজন সহকারী। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এই কর্নারটি উদ্বোধন করেন।
বঙ্গবন্ধু কর্নারের দায়িত্বে থাকা ওমর ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশোর, বৈবাহিক জীবন, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম, সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন এবং অসংখ্য বিখ্যাত বক্তৃতাসহ তাঁর জীবন ও কীর্তি নিয়ে রচিত দেশি-বিদেশি বিখ্যাত লেখকদের প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রন্থ রয়েছে কর্নারটিতে। বিভিন্ন ভাষায় লেখা বেশ কিছু বইয়ের অনুবাদগ্রন্থও রয়েছে। রয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন আর্টিকেল।
তিনি বলেন, প্রতিদিন এখানে প্রায় ৭০-৯০ জন শিক্ষার্থী বই পড়তে আসেন। আসেন শিক্ষকরাও। এখানে বসে বই পড়তে হলে আগে খাতায় নাম লিখতে হয়। আর গ্রন্থাগারের ভিতরে গিয়ে বই পড়তে চাইলে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড জমা দিয়ে বই নিতে হয়।
সংগ্রহশালাটিতে উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে মিজানুর রহমান খানের লেখা ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’, মোহাম্মদ হান্নানের লেখা ‘শত্রুর চোখে বঙ্গবন্ধু’, গ্রেই জে. ব্যাস এর লেখা ‘দ্যা ব্লাড টেলিগ্রাম’, প্রফেসর ড. মিজানুর রহমানের লেখা বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ, ড. দেবব্রত দেব রায়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-জীবন ও সংগ্রাম’, ড. সুনীল কান্তি দে’র ‘বায়ান্নোর গোয়েন্দা নজরে শেখ মুজিবুরের দৈনন্দিন জীবন’, কবীর চৌধুরীর ‘চিরঞ্জীব শেখ মুজিব’, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ মুজিবুর রহমান আমার পিতা’, রতনতনু ঘোষ সম্পাদিত ‘কথোপকথনে শেখ মুজিবুর রহমান’, শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, রামেন্দ্র চৌধুরীর ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ রফিকুজ্জামান হুমায়ুনের ‘খোকা থেকে জাতির পিতা’, সিকদার আবুল বাশারের ‘বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ’ এবং মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’। এ ছাড়াও প্রথিতযশা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকের গ্রন্থ রয়েছে এখানে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জামিল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থে সমৃদ্ধ সংগ্রহশালাটি আমাদের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে। আমি গ্রন্থাগারে আসলে এখানেও আসি। এটি গ্রন্থাগারের প্রবেশ মুখে হওয়ায় সহজেই সকলের চোখে পড়ে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ এমন একটি উদ্যোগের জন্য। আশা করি ক্রমান্বয়ে এ সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন বলেন, আগে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বইগুলো খুঁজতে কষ্ট হতো। বইয়ের কোড বের করতে দৌঁড়তে হতো কম্পিউটার কক্ষে কিংবা নিজেই গুগল থেকে বের করে আনতে হতো। শিক্ষকদের মনোনীত বইগুলোই পড়তে হতো। এখন অনেক সহজ হয়েছে। আমি চাইলেই বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি লেখকের বই পড়তে পারছি। সবগুলো বই একসাথে থাকায় আমাদের বেছে নিতেও সুবিধা হচ্ছে। যেটা ভালো লাগছে ওইটা পড়তে পারছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা আঁখি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার অসামান্য ত্যাগ এবং স্বপ্নের ফসল এই বাংলাদেশ, যাকে ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা ইতিহাস অসম্পূর্ণ, সেই মহামানবের উপর রচিত দেশে-বিদেশে প্রকাশিত স্বনামধন্য লেখকদের গ্রন্থ সংগ্রহ নিয়েই করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। বঙ্গবন্ধু কর্নারের যে সংগ্রহ তা পঠন এবং অধ্যয়ন করে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের স্বাধীনতা এবং ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবে এবং মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনায় আদর্শিত হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় তথা আমাদের দেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নত করবে।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবন নিবিড়ভাবে পাঠ, চর্চা ও গবেষণার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ (গবেষণা কেন্দ্র)। গত বছরের ৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় এই বঙ্গবন্ধু চেয়ার উদ্বোধন করে নিজেই এ পদে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু চেয়ার নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২০তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ বাস্তবায়ন কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে চার বছরের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে নিয়োগ দেয়। তবে বঙ্গবন্ধু নিয়ে গবেষণায় নীতিমালায় থাকা বেতন-ভাতা নিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উপ রেজিস্ট্রার গাজী মোহাম্মদ নুরউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন-কীর্তির উপরে বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে। হাজারো গ্রন্থ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের রাজনীতি গবেষকদের অনেকেই এখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবার নিয়ে আমার শতাধিক গবেষণা-প্রকাশনা রয়েছে। মুজিব শতবর্ষকে উৎসর্গ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবে আগামী মাসে বের হবে আমার লেখা গ্রন্থ ‘বাঙালির বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব’। একই মাসে আরেকটি গ্রন্থ বের হবে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা অবিচল আস্থার ঠিকানা’। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু পরিবার নিয়ে আমার লেখা ছাপা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপানি বণ্টন ক্ষেত্রে ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধদুই সন্তানকে ঘরের বাইরে রেখে মায়ের আত্মহত্যা