চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা রুটের ডেমু ট্রেন যাত্রী নিয়ে ফের নিয়মিত চলাচল শুরু করবে শীঘ্রই। দীর্ঘদিন অচল থাকার পর অবশেষে দেশীয় প্রযুক্তিতে সচল করা হলো এটি। বাংলাদেশ রেলওয়ের দেশীয় প্রকৌশলীরা এই ট্রেন নিয়মিত সচল রাখতে সক্ষম হবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। ২০১৩ সাল থেকে এ ট্রেনের যাত্রা। তখন ভোরবেলায় কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম সিটির দিকে ছুটে যেত এটি। চিনকি আস্তানায় পৌঁছাতো সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে, বড়তাকিয়া স্টেশনে ৭.২০ মিনিটে। সাড়ে ৮টা নাগাদ পৌঁছাত চট্টগ্রাম শহরে। বিকাল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে বড়তাকিয়া পৌঁছাত সন্ধ্যা ৬টায়। চিনকি আস্তানা পৌঁছাত ৭.১৫ মিনিটে। ফলে মীরসরাই অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের অফিস পাড়ার লোকজন যাতায়াতে অনেক উপকৃত হতো। তবে ৭ বছর ধরে নিয়মিত চলাচলের পর এই রুটের ট্রেনটি ২০২০ সালের দিকে অচল হয়ে যায়। এই রুটে ডেমু ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াতকারী চিনকি আস্তানা স্টেশনের যাত্রী জাভেদ ভূঞা (৪২) বলেন, আমি একটি সরকারি অফিসে চাকুরি করি। বাড়িতে মা-বাবা পরিবার সবাই আছে। এই ট্রেনে নিরাপদে যাতায়াত করায় চাকুরি ও পরিবারে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রাখতে পেরেছি। ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাবার পর একদিকে বাড়তি খরচ, অপরদিকে পরিবার অফিসের জন্য বাড়তি সময় রাখতে গিয়ে জীবনযাত্রা অনেক বিপর্যস্ত এখন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই স্টেশন থেকে একসময় অনেক মানুষ ডেমু ট্র্রেনে যাতায়াত করতো। রেলওয়ের প্রকৌশলীদের এই সাফল্যে অন্যান্য রুটের পাশাপাশি এই রুটের ডেমু ট্রেনটিও আশা করছি খুব শীঘ্রই চালু হবে। এতে আবার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
রেলওয়ের সীতাকুন্ড থেকে ফেনী আঞ্চলিক উপ সহকারি প্রপৌশলী রিটন চাকমা বলেন, এই ট্রেনটি চালু হলে আগের মতো আবার মীরসরাই উপজেলার চিনকি আস্তানা, বড়তাকিয়া ও সীতাকুন্ড উপজেলার কয়েকটি স্টেশন নতুন উদ্যোমে প্রাণ ফিরে পাবে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মডিউল পাল্টে ডেমু ট্রেনে বসানো হয়েছে ইনভার্টার। বাদ দেওয়া হয়েছে কোটি টাকার চীনা ব্যাটারি। লাগানো হয়েছে সুলভ মূল্যের ব্যাটারি। আর এই ব্যাটারির সাহায্যেই দিব্যি স্বাভাবিক গতিতে ছুটে চলছে ডেমু ট্রেন।
চীনা প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তি সংযোজনে কাজ করা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, অনেকটা বলা যায়, বাংলা ট্রাক যেরকম চালায় ব্যাপারটা ওই রকমই করা হইছে। তাতে অনেক কম টাকা খরচ করে এগুলো চালু করা সম্ভব হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা খরচে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ রেলে যুক্ত হয় ২০ সেট ডেমু ট্রেন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অচল হতে শুরু করা এই ট্রেনগুলো। এরপর কয়েক বছর সেবা পায়নি দেশের মানুষ। এগুলো সারাতে উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠান ক্রয়মূল্যের কাছাকাছি অর্থ দাবি করেছিলো। খরচের কথা বিবেচনায় উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে মেরামত করা হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে পাওয়া যায় সেরকম মালামাল দিয়ে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে আমরা ডেমু ট্রেনগুলো মোডিফাই করেছি, তাতে এইগুলো নিয়মিত মেন্টেন করা যাবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের কম দূরত্বে চলাচলের জন্য মূলত এই ডেমু ট্রেন ক্রয় করা হয়। চীনের থাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেড থেকে এই ডেমু আমদানিতে খরচ হয়েছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। ট্রেনগুলোর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০ বছর। সে হিসেবে ২০১৩ সালে তৈরি করা এসব ডেমু ট্রেন চলার কথা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। সাত বছরের মধ্যে ২০টি ডেমুর ১৩টিই বিকল গেছে।