শঙ্খচরে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ

স্বাদে গুণে অতুলনীয়, চাহিদাও বেশি

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

শঙ্খনদের চরে পুরোদমে শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজির আবাদ। চলতি ভাদ্র মাসের শুরু থেকে কৃষকরা শীতকালীন অন্যতম সবজি শিম, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচা মরিচ, বরবটি, তিত করলা, ধনেপাতা, লাউ, ঝিঙা, চিচিংগা ও ঢেঁড়শসহ হরেকরকম সবজির আবাদ শুরু করেছেন। তবে অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে এ মৌসুমে সবজি চাষ ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া সীমান্তের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত শঙ্খনদের তীরবর্তী চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি, দোহাজারী পৌরসভা, বরমা, বৈলতলী, সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চাষ হয় শীতকালীন এসব সবজির। স্বাদে, গুণে অতুলনীয় হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে বেশি মনোনীবেশ করেন। অর্থও বিনিয়োগ করেন বেশি।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি হিসেবে শীতকালিন সবজির (রবি মৌসুম) সময় শুরু অক্টোবর মাস থেকে। কিন্তু এর অনেক আগে থেকেই শঙ্খচরের কৃষকরা আগাম হিসেবে শীতকালন সবজি উৎপাদন শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দোহাজারী পৌরসভাস্থ শঙ্খনদের বিশাল চরে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহের মধ্যেও কৃষকরা সবজি চাষের জমি প্রস্তুত করছেন। অনেকেই আবার রোপণ করে ফেলেছেন মুলা, বেগুন, বরবটি, তিত করলা, ধনেপাতার চারা। বীজতলা প্রস্তুত করছেন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজির। অনেক কৃষক রোপণকৃত সবজির চারা পরিচর্যা করছেন, পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। এর মধ্যে আবার মুলা সারা বছরই চাষ করেন কৃষকরা। তাই অনেকেই ইতিমধ্যে অল্প সংখ্যক মুলা বাজারে বিক্রিও করছেন।
কৃষক মো. মানিক বলেন, শ্রাবণ মাসের শুরুর দিকে ১৪ শতক জমিতে অগ্রিম মুলা রোপণ করেছিলাম। এখন তা প্রতি বার (৬০/৭০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কৃষকরা জানান, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কার্তিক মাসের শুরু থেকেই শঙ্খচরের সকল প্রকার সবজি পুরোদমে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
শঙ্খচরের নবীন কৃষক মো. মারুফ জানান, ১৬০ শতক (৪ কানি) জমিতে এবার মুলা, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কাঁচা মরিচ চাষের টার্গেট করেছেন। ইতিমধ্যে ৪০ শতক জমিতে শ্রাবন মাসের মাঝামাঝি সময়ে বরবটির চারা রোপণ করেন। একই সাথে ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে ৪০ শতকের মতো জমিতে মুলার বীজ বপন করেছেন এবং মূলার ফলনও ভালো হয়েছে। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুলা ও বরবটি পুরোদমে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে চাষাবাদে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে, তীব্র তাপদাহের কারণে শ্রমিকের মজুরিও বেশি। ঊর্ধ্বমুখী সার, কীটনাশক ও বীজের দামও। তাই প্রতি ৪০ শতক (১ কানি) জমিতে চাষাবাদ করতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
কৃষক মোহাম্মদ মোস্তফাজ্জামান জানান, তিনিও এবার প্রায় ১২০ শতক জমিতে মুলা, তিত করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কাঁচা মরিচ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে দেড় কানি (৬০ শতক) জমিতে মুলা ও তিত করলা রোপণ করেছেন। পাশাপাশি ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কাঁচা মরিচের বীজতলা তৈরি করেছেন এবং চারা উঠতে শুরু করেছে। ১০/১৫ দিনের মধ্যেই বাকি জমিতে এসব চারা রোপণ করতে পারবেন। চলতি মৌসুমে তীব্র তাপদাহ ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চাষাবাদে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
প্রবীন কৃষক নুরুল ইসলাম নুরু, আবুল কাশেম, আবু বক্কর, মোহাম্মদ আলী, মো. নাসির উদ্দিন জানান, ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই আগাম হিসেবে মুলা, বেগুন, বরবটি চাষ শুরু করেন কৃষকরা। তা কার্তিক মাসের শুরু থেকেই বাজারে বিক্রি করতে পারেন। অধিক লাভের আশায় তারা আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করে থাকেন। শঙ্খচরের মাটি যে কোনো ধরনের সবজি চাষের জন্য আদর্শ। আবার একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বেগুন ও মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির সাথে কাঁচা মরিচের চাষ করা যায়। এখানে উৎপাদিত সবজি স্বাদে অতুলনীয়, পুষ্টিগুনে ভরা। চাহিদার কারণে বর্ষার মধ্যেই আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নেমে পড়েন তারা। এক্ষেত্রে অনেক সময় লাভবান হন, আবার অনেক সময় ভারী বর্ষণে ক্ষতির শিকারও হন। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বড় সবজি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরাই তাদের প্রধান গ্রাহক বলেও জানান তারা।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার জানান, প্রতি মৌসুমে শঙ্খনদের চরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতকালীন সবজির ভালো চাষাবাদ হয়। এখানকার সবজি স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় চাহিদাও বেশি। তিনি বলেন, গত মৌসুমে চন্দনাইশে ২ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছিল। কৃষি অফিস থেকে এখানকার কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅদম্য ইচ্ছাশক্তিতে শেষের পথে
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে স্বামীর মারধরে নববধূর মৃত্যু