চাল আমদানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমানোর জেরে পাইকারীতে কমছে চালের দাম। গতকাল একদিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় কমেছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারীতে কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাবে পড়তে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
চালের আড়তদাররা বলছেন, চালের বাজারে কোনো ধরণের সরবরাহ সংকট না থাকার পরেও কিছু অসাধু মিলার শুধুমাত্র ডিজেল এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে পুঁজি করে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেন। অনেকে গুদামে চাল মজুদও করে রাখেন। তবে গত রোববার সরকার শুল্ক কমানোর জেরে ২৪ ঘণ্টা না ঘুরতেই চালের দাম কমিয়ে দেন মিলাররা। তবে ভোক্তারা বলছেন, চালের বাজারে অজানা কারণে প্রশাসনের মনিটরিংটা হচ্ছে না। যার কারণে বিক্রেতারা একেক সময় একেক অজুহাত দাঁড় করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেন।
গতকাল নগরীর দুই প্রধান চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, স্বর্ণা সিদ্ধ, পাইজাম সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ, মিনিকেট আতপ, কাটারিভোগ সিদ্ধ, কাটারিভোগ আতপ, বেতি আতপ ও মোটা সিদ্ধের দাম বস্তায় সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
চালের আড়তদাররা জানান, বর্তমানে পাইকারিতে জিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় ১০০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। এছাড়া মিনিকেট সিদ্ধ ১০০ টাকা কমে ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং মিনিকেট আতপ ১৫০ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। অন্যদিকে পাইজাম সিদ্ধ ১০০ টাকা কমে ২ হাজার ৭০০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ ১০০ টাকা কমে ২ হাজার ৪০০ টাকা, বেতি আতপ ১০০ টাকা কমে ২ হাজার ৪০০ টাকা, পাইজাম আতপ ১০০ টাকা কমে ২ হাজার ৬০০ টাকা, মোটা সিদ্ধ প্রতি বস্তা ১৫০ টাকা কমে ২ হাজার ১৫০ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ১৫০ টাকা কমে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা, কাটারিভোগ আতপ ১৫০ টাকা কমে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা এবং কাটারিভোগ সিদ্ধ ১৫০ টাকা কমে বর্তমানে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম রাইচ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উল্লাহ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে প্রত্যাশিত ক্রেতা নাই। এর মধ্যে সরকার শুল্ক কমানোর কারণে চালের দাম নিম্নমুখী। চালের বাজারে দাম যখন তখন সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, আসলে বাজার তার আপন গতিতে চলে। সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। সরকার এখন আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে ফলাফলও হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম আজাদীকে বলেন, চালের বাজার এখন পড়তির দিকে। সরকার ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, চালের দাম শুল্ক কমানোর কারণে কমছে। আসলে যারা ধান-চাল মজুদ করে তারাই অধিকাংশ চাল আমদানি করে। চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে হলে সরকারকে অবশ্যই বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, গত রোববার চাল আমদানিতে মোট নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক মোট ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ফলে এখন থেকে চাল আমদানিতে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পরিশোধ করতে হবে ব্যবসায়ীদের।