ছয় লেন করতে চলছে জরিপ, সিদ্ধান্ত শীঘ্রই

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে গাড়ির চাপ

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন অংশসহ পুরো মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায়ই লেগে যাচ্ছে যানজট। সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, বিগত এক দশকে যানবাহন ও মালবাহী গাড়ি এত বেশি বেড়ে গেছে যে মহাসড়কটি শীঘ্রই ছয় লেন না হলে স্বাভাবিক নিরবচ্ছিন্ন যাত্রাপথ আর থাকবে না। এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, এই মহাসড়কের উন্নয়ন নিয়ে চলছে জরিপ কার্যক্রম। শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
গত দুই দশক পূর্বে যখন টু-লেন এর সংকীর্ণ ট্রাংক রোড ছিল তখন নিত্য যানজট লেগে থাকত সড়কে। ফোর লেনে রূপান্তরের পর শুরুর দিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ৪ ঘণ্টায় পৌঁছা যেত। আর বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে আবারো সেই আগের মতো ৬-৭ ঘণ্টা যেন নিয়মিত হয়ে উঠেছে। কখনো যানজটে পড়লে আরো বাড়ছে সময়। একদিকে প্রতিনিয়ত যানবাহন ও মালবাহী গাড়ির সংখ্যা এতোই বাড়তে শুরু করেছে যে একুশ শতকের শুরু থেকেই এই মহাসড়ক আরো দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বর্তমান সময়ে সড়কের বিভিন্ন অংশে সংস্কার কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদার এক লেন বন্ধ রাখায় নিত্য বিশালাকার যানজটে দুর্ভোগে নাকাল দূর-দূরান্তের আর কাছের যাত্রীরা। সংস্কারের জন্য কয়েকমাস পূর্বে মীরসরাই
উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ছিল নিত্য যানজট। বর্তমানে কয়েক সপ্তাহ ধরে সীতাকুণ্ডের কুমিরা, ভাটিয়ারী এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। অথচ সড়কের একটি লেন পুরোপুরি বন্ধ না করে অর্ধেক উন্মুক্ত রেখে এই সংস্কার কাজ করলে এমন যানজট সহনীয় রাখা যেত। গণমানুষের এমন দুর্ভোগে সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কারোরই যেন ভ্রুক্ষেপ নেই।
এক জরিপে দেখা গেছে, এই মহাসড়ক রুটে প্রতিদিন দুই লক্ষাধিক যান ও মালবাহী গাড়ি চলছে। কখনো এর সংখ্যা আরো বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিকেল হলেই বন্দর থেকে হাজার হাজার ট্রাকের সারি রাত গভীর হওয়া পর্যন্ত বেরুতেই থাকে লাইন ধরে। প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৫০ হাজার ট্রাকই তখন পুরো মহাসড়কে ঢাকামুখী লেন দখল করে নেয়। তখন আর যাত্রীবাহী বাসগুলো স্বাভাবিক গতি নিয়ে চলতে পারে না। এসি-নন এসি সকল বাস, এম্বুলেন্স, কার, মাইক্রো সবই তখন ট্রাকগুলোর পেছনে পেছনে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার বেগে চলতে হয়। অথচ সকল যানবাহনই এই মহাসড়কে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার স্বাভাবিক গতি নিয়েই চলার কথা।
ভুক্তভোগী বারইয়াহাটের ব্যবসায়ী জাবেদ ভূঁইয়া বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় চট্টগ্রামের এ কে খান মোড় থেকে স্টার লাইনে উঠেছি দেড় ঘণ্টায় বারইয়াহাট আসবো বলে। সেখানে ভাটিয়ারী আর কুমিরা জ্যামে পড়ে ৪ ঘণ্টা লেগেছে প্রায়। এমন সমস্যা সম্প্রতি প্রায়ই হচ্ছে। ঢাকা থেকে মীরসরাই আসা ইউনিক পরিবহনের যাত্রী বোরহান উদ্দিন বলেন, ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাস ছাড়ার পর কাঁচপুর, সোনার গাঁ আর মেঘনায় তিন ঘণ্টা লেগে গেল। মীরসরাই আসত আগে ৪ ঘণ্টায়, এখন ৭ ঘণ্টায় পৌঁছালাম। অথচ ছুটির দিন ভোরে যানজট না হলে ঠিকই তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাই। সকালে শহরমুখী অনেক চাকরিজীবী ও প্রয়োজনীয় কাজ সারতে রওনা হয়ে যথাসময়ে তো দূরের কথা অনেক দেরিতেও পৌঁছাতে পারছে না। এই মহাসড়কে যাত্রীদের এমন সব দুর্ভোগ লাঘব কিভাবে হতে পারে এই বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিমত, শীঘ্রই ছয় লেনে উন্নীত না করলে এই মহাসড়কে চলাচলে গণদুর্ভোগ আরো বাড়বে।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের চট্টগ্রাম (উত্তর) অঞ্চলের দায়িত্বরত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন অনেক বেড়ে যাওয়ায় এই মহাসড়ককে ছয় লেনে রূপান্তরিত করার জরিপ কার্যক্রম চলছে। জরিপ শেষে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সেই পর্যন্ত এই মহাসড়কের বর্তমান সক্ষমতা রক্ষা করতে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। তাতে যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধা হলেও আমরা অনেক সময় যানজট বেড়ে গেলে দুই লেনই দ্রুত উন্মুক্ত করে দেয়ার চেষ্টা করি। এই উন্নয়ন কাজ শেষ হলে আশা করছি জনদুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদোষ স্বীকার করলেন আরএনবির ৩ সদস্য
পরবর্তী নিবন্ধআড়াই হাজার রোগীর খাবার সরবরাহে অনিশ্চয়তা