আড়াই হাজার রোগীর খাবার সরবরাহে অনিশ্চয়তা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের খাবার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে খাদ্য-পণ্য সরবরাহকারী চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপারগতা প্রকাশ করে একজোটে চিঠি দেয়ায় এ অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। অপারগতা প্রকাশ করা চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- মের্সাস ইয়াহিয়া স্টোর, মেসার্স রাহাদ এন্টারপ্রাইজ, মের্সাস জিসান এন্টারপ্রাইজ এবং মের্সাস ফেরদৌস ট্রেডার্স। এর মধ্যে মের্সাস ইয়াহিয়া এন্টারপ্রাইজ শুকনো দ্রব্যাদি (চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা প্রভৃতি) সরবরাহ দিয়ে থাকে। ড্রেসড মাছ-মাংস সরবরাহ দেয় মের্সাস রাহাদ এন্টারপ্রাইজ। মেসার্স জিসান এন্টারপ্রাইজ বিভিন্ন তরি-তরকারি (শিম, আলু, পেঁপে, সাগর কলা ইত্যাদি) সরবরাহ দিয়ে থাকে। আর রুটি-বিস্কিট ও ফলমূল সরবরাহ দেয় অপর প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফেরদৌস ট্রেডার্স। গত ১৬ আগস্ট চমেক হাসপাতাল পরিচালক বরাবর একজোটে চিঠি দিয়ে খাদ্য-পণ্য সরবরাহে অপারগতা জানায় এ চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চিঠিতে বাজারে খাদ্য-পণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের কারণে সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় উল্লেখ করে এ অপারগতা প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এ সংক্রান্ত চিঠি গত ১৭ আগস্ট হাতে পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। অবশ্য, কার্যাদেশ প্রদানকালীন এ সব প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি মোতাবেক সরবরাহ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই দাবি করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এ সব প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। চুক্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এ সব খাদ্য-পণ্য সরবরাহে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের (আগের প্রতিষ্ঠানগুলোর) সরবরাহ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা চিঠির মাধ্যমে এই চার প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিয়েছি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অপারগতা সংক্রান্ত চিঠির জবাবে গত ২৩ আগস্ট এই চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে এ চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিধি ও শর্ত অনুযায়ী দূর-দূরান্ত হতে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে এ সংক্রান্ত আবেদন
বিবেচনা করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে কার্যাদেশের শর্তাবলী ও নন-এমএসআর দরপত্রের নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী জনস্বার্থে হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন পথ্য সরবরাহে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত এ চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরপত্রে অংশ নিয়ে গত অর্থ বছরে (২০২১-২২) মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান এক বছরের খাদ্য-পণ্য সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। ২০২২ সালের ৩০ জুন এ সব প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়। তবে চুক্তি মোতাবেক নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কার্যাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে। সে হিসেবে এ সব প্রতিষ্ঠানের অনূকুলে প্রথমে এক মাস (৩০ জুলাই পর্যন্ত) এবং দ্বিতীয় দফায় আরো দুই মাস (৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) কার্যাদেশের মেয়াদ বাড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত অর্থ বছরে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো খাদ্য-পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। বাড়তি তিন মাসের মধ্যে এরই মাঝে প্রায় দুই মাস সরবরাহ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বাজার দরের ঊর্ধ্বগতির কারণে
আগের দামে খাদ্য-পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। এর ফলে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগের দামে খাদ্য-পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে অপারগতা প্রকাশ করেছে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অবশ্য আরো দুটি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে ডিম, দুধ ও হরলিকস সরবরাহ দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠান দুটি অপারগতা জানায়নি।
জানতে চাইলে মের্সাস ফেরদৌস ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম লিটন গতকাল আজাদীকে বলেন, এক বছর আগে আমরা যখন দরপত্রে অংশ নিই, তখনকার বাজার দর আর বর্তমান বাজার দরে অনেক তফাৎ। আগে আমরা যে দরে পথ্য সরবরাহ করেছি, এখন খরচ তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এর ফলে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। যার কারণে আমরা পথ্য সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করেছি। আমাদের অব্যাহতি দিতে বলেছি। কারণ, দর না বাড়ালে আগের দরে কোনো ভাবেই খাদ্য-পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব না। আমরা সেটিও বলেছি।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দরপত্রে অংশ নেয়াকালীন ‘সিকিউরিটি মানি’ বাবদ নির্দিষ্ট অংকের অর্থ জমা দিতে হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কার্যাদেশ প্রাপ্ত ৬ প্রতিষ্ঠানের ‘সিকিউরিটি মানি’ হিসেবে প্রায় কোটি টাকা হাসপাতালের তহবিলে জমা আছে। এখন কার্যাদেশের বিধি ভেঙে সরবরাহ বন্ধ করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সিকিউরিটি মানি বাবদ গচ্ছিত অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে দৈনিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। ভর্তি থাকা প্রত্যেক রোগীকে সকাল ও বিকেলের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। একজন রোগীর খাবার বাবদ (নাস্তা ও দুই বেলা খাবার) দৈনিক ১২৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছয় লেন করতে চলছে জরিপ, সিদ্ধান্ত শীঘ্রই
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ