অধীনস্থদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নয়

মুসলেহ্‌উদ্দিন মুহম্মদ বদরুল | বৃহস্পতিবার , ২৮ জুলাই, ২০২২ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

আপনার ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের কথা ভাবছি। অনেক দিন ধরে আপনাকে ও পরিবারকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেই কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে গাড়ির ধোয়া মোছা, সকাল সকাল বাচ্চাদের স্কুল ডিউটি, যথা সময়ে আপনাকে অফিসে আনা-নেয়া, রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক ক্লাব ও বাসায় পৌঁছানো ছাড়াও আরও কিছু পারিবারিক কাজকর্ম এই নিরীহ ড্রাইভার মানুষটি করে থাকেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যে লোকটি দিনরাত পরিশ্রম করছেন তিনি আপনার ড্রাইভার। আপনার অফিস সময় সকাল ৯টা- ৫টা। কিন্তু, তার ডিউটি শুরু হয় সেই ভোর থেকে আর অনেক সময় শেষ হয় মধ্য রাতে।
আপনি বারে গেছেন। বাংলা- বিদেশি সেবন করে ঢুলুঢুলু হয়ে রাত ১ টায় বার থেকে বের হলেন। ড্রাইভার আপনাকে নিরাপদে বাসায় শুধু পৌঁছিয়ে দিলেন না আপনার ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করে নিজে শারীরিক সাপোর্ট দিয়ে ৪/৫ তলার সিঁড়ি বেয়ে ফ্ল্যাট বাড়ির দোরগোড়া পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন যেহেতু রাত ১২ টার পর লিফট বন্ধ হয়ে যায়। রাত ২টায় বাসায় ফিরে আবার ভোর ৬ টায় ড্রাইভার নামক রোবটটি ডিউটিতে হাজির। একটু দেরি হলেই আপনার গিন্নির বকাঝকা শুরু হয়ে যায়। আচ্ছা, একটু ভেবে দেখেছেন, লোকটি রাতে কয় ঘণ্টা ঘুমালেন ?
তাঁরও স্ত্রী-পুত্র আছে। সংসার আছে। আপনাদের ডিউটি শেষ করে তিনি যখন বাসায় ফিরেছেন তখন হয়তো তাঁর শিশু সন্তানটি নিদ্রামগ্ন। আবার যখন ডিউটিতে বেরিয়ে যান তখনও শিশুটি ঘুমে। এভাবে দিন যায়। মাস যায়। মাসে যে ২/১ দিন ছুটি ভোগ করে সেই সময় হয়তো স্ত্রী তার স্বামীর ভালোবাসা পায়। সন্তান তার বাবার আদর পায়। আচ্ছা, আপনি যখন কোনো ক্লাবে ভোজপর্বে উদর ভর্তি করে খেতে শুরু করলেন তখন কি সেই নিরীহ ড্রাইভারের কথা আপনার একবারও মনে পড়ছে? কিন্তু, এমনও কিছু আল্লাহর বান্দা আছেন যাঁরা খেতে বসার আগে মুঠোফোনে ড্রাইভারকে খোঁজ করেন এবং সেই রকম উদার মনের একজন মানুষকে আমি জানি যিনি খাওয়ার আগে ড্রাইভারকে স্মরণ করতে কখনো ভুলেন না। কিন্তু, আমার তো মনে হয় না, ভোজপর্ব শেষে গাড়িতে ওঠার মুহূর্তে আপনি কখনও জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘তুমি খেয়েছ?’ অথচ, আমরা জানি, স্বাগতিক দাওয়াত দাতা ড্রাইভারদের জন্য বাড়তি আয়োজন করে থাকেন এবং নিমন্ত্রিতদের তালিকায় তাঁদেরকেও হিসাবে ধরা হয়। আপনি চট্টগ্রাম-ঢাকা লং ড্রাইভে যাচ্ছেন। গাড়িতে মাত্র আপনারা দুইজন লোক। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন প্রসংগে কিছু খবরাখবর শেয়ার করবেন। দেখবেন, আপনি তাঁকে অশিক্ষিত মনে করলেও তাঁর থেকে অনেক শিক্ষণীয় কিছু জানতে পারবেন। সেইজন্য, কাউকে ছোট ভাবা উচিত নয়।
আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছিলেন , ‘তোমাদের অধীনদের প্রতি খেয়াল রাখবে তোমরা যা খাবে, তাদের তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে, তাদেরও তা পরাবে। কারণ, প্রিয় নবীজী বুঝতে পেরেছিলেন, আমার উম্মতদের মধ্যে এক শে্রিণর লোক নিজের অধীনস্থ লোকদের প্রতি বৈষম্য মূলক আচরণ করবে’। সুতরাং, নবীজীর মহা মূল্যবান বাণীকে শিরোধার্য করে আসুন একবার ভাবি, ছোট চাকরি করলেও এরাও আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয়