ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, বর্তমান সরকার জঙ্গল সলিমপুরে বসতি স্থাপনকারী ১৫ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন এবং সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এখানে আর কোনো ভূমিদস্যু, কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না।
গতকাল রোববার বিকালে জঙ্গল সলিমপুরে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জঙ্গল সলিমপুর সরকারের খাস জমি। এর দেখভালের জন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। কিছু ভূমিদস্যু এখানে জমি বিক্রি করছে। যারা কিনেছে বা যারা বিক্রি করছে, কেউ জমির মালিক না, বৈধ না। এ জমি কারো কাছে হস্তান্তরযোগ্য না। আজ থেকে কাউকে ভাড়া দেবেন না। সরকারই এ জায়গার একমাত্র মালিক। গরিবের ক্ষতি হোক তা আমরা চাই না। একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে কিভাবে আপনারা শান্তিতে থাকবেন তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। কাউকে এখান থেকে সরানো হবে না। যে যেখানে আছেন, থাকেন। অন্য কোথাও যেতে হবে না। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আপনারা এখানেই থাকবেন। আপনাদের এখানেই পুনর্বাসন করা হবে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, এখানে ভূমিদস্যু অপরাধী রয়েছে। বাইরে থেকে এসেও এখানে অপরাধীরা শেল্টার নিচ্ছে। তাদের প্রশ্রয় দিবেন না। অতীতে
এখানে কী হয়েছে তা বাদ। ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলবে না। সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করুন। অন্যথায় আপনাদের পক্ষে আমি থাকব না। প্রধানমন্ত্রী যতদিন আছেন আপনাদের চিন্তা নাই।
তিনি বলেন, এখানে জমি বেচাবিক্রি হবে না। এখন থেকে এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। যে খালি জায়গাগুলো রয়েছে সেখানে উন্নয়ন কাজ হবে। কারাগার, হাসপাতাল, অনেক কিছুই হবে। তাতে কেউ বাধা দিবেন না। আলীনগরে মসজিদ যেটি রয়েছে সেটিও থাকবে। তবে সেখানে যারা ঝুঁকি নিয়ে থাকছে তাদের সরিয়ে নেয়া হবে।
সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গরিবের ক্ষতি হয় এমন কিছুই জঙ্গল সলিমপুরে করা হবে না। কাউকে এখান থেকে উৎখাত করা হবে না। যারা ভূমিহীন, যারা এখানে থাকছেন, সবাইকে পুনর্বাসন করা হবে। বর্তমানে আপনারা যে অবস্থায় আছেন, সেটাকে বলে জিম্মি অবস্থা। সরকারকে সহযোগিতা করুন। সন্ত্রাসীদের স্থান দিবেন না। এখানে কেউ ভূমি নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, এখানে নানা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা থাকবে। গ্রাম হবে শহর। তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রমে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের চাঁদা দিবেন না। আপনাদের এখানেই পুনর্বাসন করা হবে। যেখানে যেখানে পাহাড় কাটা হয়েছে সেখানে ১ লাখ গাছ রোপণ করা হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম, মন্ত্রীর একান্ত সচিব রেজ্জাকুল ইসলাম, উপপরিচালক স্থানীয় সরকার ড. বদিউল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) মাসুদ কামাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল ও সলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ সমুন্নত রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য জঙ্গল সলিমপুর একটি আদর্শ স্থান। চট্টগ্রাম শহর থেকে এর দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এখানে ৫টি মৌজায় মোট খাস জমির পরিমাণ প্রায় ২৮শ একর। নব্বই দশক থেকে এখানে পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে অবৈধভাবে বসবাস শুরু হয়। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে তৈরি করা স্থাপনাগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অপকর্ম করে আসা সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করছে একটি গোষ্ঠী। শতাংশ প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জমি বিক্রি হয় এখানে। এ পর্যন্ত জঙ্গল সলিমপুরে প্রায় ৪শ একর পাহাড় কাটা হয়েছে। এখান থেকে ভূমিদস্যুদের তাড়াতে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয় জেলা প্রশাসন।
জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্পে যা থাকছে : জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্পে থাকছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি স্পোর্টস ভিলেজ, জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল, একটি সাফারি পার্ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, একটি নান্দনিক মসজিদ, উচ্চ শক্তির বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র, পাহাড় ব্যাবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ছিন্নমূলদের পুনর্বাসন।












