নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিশ্বকে শাস্তি, এটাতো মানবাধিকার লঙ্ঘন : প্রধানমন্ত্রী

| শুক্রবার , ৮ জুলাই, ২০২২ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জবাবে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো পুরো বিশ্বের মানুষকে শাস্তির মুখে ফেলে দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার বিবেচনায় এটা ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানুষকেও যে ভুগতে হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেছেন, স্যাংশন দিয়ে কখনো কোনো দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেটা নিশ্চয় এখন দেখতে পাচ্ছেন। কাজেই এই স্যাংশন তুলে দেওয়া। যুদ্ধ যারা করার, করতে থাকেন। কিন্তু পণ্য পরিবহন বা আমদানি রপ্তানিটা যাতে সহজভাবে হয়, আর সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত আট তলা অফিস ভবন উদ্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একই অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ বিতরণ করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেশে আমি সব সময় চেষ্টা করছি আমাদের যে মাটি, মানুষ আছে, আমরা উৎপাদন বাড়াব। আমাদের খাদ্যটা যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করে চলতে পারি, সেই ব্যবস্থাও করব। সাথে যদি আরো কাউকে সাহায্য করতে পারি, সেটাও করব। কিন্তু সেই উৎপাদন বাড়াতে গেলে আমাদের সার প্রয়োজন, আমাদের ডিজেল প্রয়োজন। আমাদের বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন। সেটা আমরা পাচ্ছি না।
গত এক যুগে উন্নয়নের গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া বাংলাদেশকেও এখন অন্য অনেক দেশের মত মহামারীর ধাক্কা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ভুগতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য ও লেনদেন একপ্রকার বন্ধ। খাদ্য ও জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে, দেশে দেশে আতঙ্ক জাগাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। যুদ্ধের প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে কথাও শেখ হাসিনা তুলে ধরেন। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ওই নিষেধাজ্ঞাকে বাংলাদেশের জন্যও ‘বিরাট এক চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বর্ণনা করেন সরকারপ্রধান।
মিয়ানমার থেকে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবর্তনও যে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আটকে আছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা মানবিক কারণে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তিনটা বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য এটা আসলে একটা বিরাট বোঝা। একে তো করোনাভাইরাস, তার উপর যুদ্ধ, এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোও যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের উপরে আরেকটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর, সেটা সকলের উপলব্ধি করা উচিত। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং দেশগুলো আরেকটু সক্রিয় হলে এই রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে। তাদের ছেলে মেয়েরা যেন তাদের দেশে মানুষ হতে পারে, তারা একটা ভালো পরিবেশে চলে যেতে পারে। এভাবে ক্যাম্পের জীবন যাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সেই ব্যাপারেও সকলে একটু সক্রিয় হবেন, সেটাই আমি আশা করি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চুক্তি করা, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি, ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময়, সমুদ্র সীমায় অধিকার অর্জনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের হলরুমে এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড্রেনে বাঁধ দিয়ে কলাবাগান
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতাল