হিসাবরক্ষককে সবধরনের আর্থিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি

জেনারেল হাসপাতাল ।। ভূয়া স্মারকে বিল ছাড়করণের চেষ্টা ।। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ জুন, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

ভুয়া স্মারক নম্বর তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল ছাড়করণের চেষ্টার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানকে সকল ধরনের আর্থিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। অপর এক আদেশে মো. ফোরকানের স্থলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিনকে হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নাছির উদ্দিন নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করবেন বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, হিসাবরক্ষক ফোরকানকে সকল প্রকার আর্থিক সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার স্থলে দায়িত্ব পালনের জন্য আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এদিকে, জালিয়াতির এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর স্বাক্ষরিত গতকাল (২৯ জুন) প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে কমিটি গঠনের এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাখাওয়াত উল্ল্যাহকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীকে। আর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়াকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর গতকাল আজাদীকে বলেন, তিন সদস্যের এই কমিটিকে তদন্ত পূর্বক তিন কর্মদবিসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল রাত পর্যন্ত মামলা হয়নি : জালিয়াতির মাধ্যমে মঙ্গলবার বিল ছাড়করণের চেষ্টার ঘটনায় গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা রেকর্ড হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করেছেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। আর মামলা দায়েরের প্রক্রিয়ায় শেষ না হওয়ায় বিধি অনুযায়ী ফোরকানকে সাময়িক বরখাস্ত করা যায়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ডা. সেখ ফজলে রাব্বি দাবি করেছেন, মামলা দায়ের হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে কথা বলেছি। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে দুদক নাকি থানায়, কোথায় মামলা হবে সেটি স্পষ্ট না করে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব স্পষ্ট জানা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মামলা হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। তিনি বলেন, মঙ্গলবারই মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি এসেছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। সেভাবেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখাকালীন বুধবার (গতকাল) রাত ১১টায়ও এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন কোতেয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর।

প্রসঙ্গত, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরের বকেয়া বিল বাবদ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার ব্যয় মঞ্জুরি আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে ছাড়করণের চেষ্টা হয়। মঙ্গলবার জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান এ বিল ছাড়করণের চেষ্টা চালান। বিষয়টি ধরা পড়ায় বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে মো. ফোরকানকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে তাকে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর কেনাকাটা নিয়ে দুদকে আগে থেকেই মামলা চলমান রয়েছে। মামলা থাকায় এর বিলও আটকে রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাচার অর্থ ফেরালে দায়মুক্তি থাকছে স্থাবর-অস্থাবরে বাদ
পরবর্তী নিবন্ধদেশে এক দিনে শনাক্ত বেড়ে ২২৪১