বর্ণাঢ্য আয়োজনে নগরের লালদীঘি চত্বরে ‘চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবারের এ আয়োজন পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঘোষণা দেন, শীঘ্রই লালদীঘির মাঠ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সাংসদ এম এ লতিফ, চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর সভাপতিত্বে উৎসব মঞ্চে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র সহ–সভাপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলিখেলার উদ্যোক্তা প্রয়াত আব্দুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল। জহরলাল হাজারীর উদ্যোগে এ উৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, কোভিড মহামারীর কঠিন সময়ে চারটি ঈদ উৎসব আমাদের পালন করতে হয়েছে। অনেক কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের ঈদ পালন করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর প্রায় কোভিডমুক্ত উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা ঈদ উদযাপন করছি। মানুষ আবার জেগে উঠেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা লালদীঘি চত্বরে সমবেত হয়েছি। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সমবেত হয়েছি। এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন। তিনি বলেন, আমি সবাইকে আশ্বস্ত করছি, সংস্কার কাজ শেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নিয়ে শিগগিরই লালদীঘির মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এখানে আবার রাজনৈতিক কার্যক্রম হবে, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হবে, খেলাধূলা হবে। দৃষ্টিনন্দনভাবে মাঠের
উন্নয়ন হয়েছে। মাঠে হাঁটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে একটি স্থায়ী মঞ্চও করে দেওয়া হয়েছে। এই মঞ্চে আমরা সবধরনের অনুষ্ঠান, সভা–সমাবেশ করতে পারব।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে গড়া আমাদের চট্টগ্রামের রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টি। সমৃদ্ধ এ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের চট্টগ্রামের মানুষের ভাষায়ও রয়েছে স্বকীয়তা। কালের বিবর্তনে আমাদের চাটগাঁর মানুষের ব্যবহৃত অনেক শব্দ প্রায় বিলুপ্তির পথে। চট্টগ্রামে যারা লেখক, কবি, সাহিত্যিক, গীতিকাররা তাদের লেখনী এবং গায়কেরা তাদের গানের মাধ্যমে এ শব্দগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। চাটগাঁইয়া গান, কবিতা ও নাটিকার সুনিপুন উপস্থাপনের মাধ্যমে লালদীঘি চত্বরের আজকের চাটগাঁইয়া ঈদ উৎসবের সফল সূচনা হতে যাচ্ছে এ আমার বিশ্বাস।
মেয়র বলেন, এই লালদীঘি পাড় অনেক ইতিহাসের সূতিকাগার। এই লালদীঘির মাঠেই বঙ্গবন্ধু জনসমক্ষে ৬ দফার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবকদের সংগঠিত করার মানসে চট্টগ্রামের সমভ্রান্ত ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার যে বলীখেলার সূচনা এ লালদীঘি মাঠে করেছিলেন তার খ্যাতি এখন দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও অনন্য স্থান করে নিয়েছে।
উৎসব মঞ্চে আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে শিল্পীরা। বেলুন উড়িয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী র্যালির উদ্বোধন করেন। ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ডদল সহকারে র্যালি লালদীঘির পাড় থেকে আন্দরকিল্লা হয়ে জামালখান পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে।