আমাদের ছেলেবেলায় ঈদের দিনের মতো মহা আনন্দের দিন আর ছিল না। রোজার শেষ দিন ইফতারের পর পর ঈদের চাঁদ দেখার জন্য নবীন–প্রবীণ সব বয়সের মানুষেরা জড়ো হতেন রাস্তার ধারে। ঈদের চাঁদটা দেখা যেত কাঁচির ন্যায়। সকলের দৃষ্টি গোচর হত না। কেউ দেখলে হাতের আঙুল উঁচিয়ে ঐ ঐ তো দেখা যায় বলে উপস্থিত লোকজনকে দেখানোর চেষ্টা করডেন।। তখন ছেলেমেয়েদের মধ্যে বয়ে যেত খুশির বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার।
ঈদের দিন ভোরে ভোরে ঘুম থেকে উঠে যেতাম। পুকুরে ডুব দিয়ে গোসল সেরে আতর মাখা নতুন জামা কাপড় পরিহিত হয়ে ঈদ জামাতে শামিল হতাম। ঈদের জামাত শেষে মুরব্বিদের সাথে কবরস্থান জেয়ারত ছিল ঐদিনের একটি পালনীয় কর্মসূচী। এরপরে শুরু হত পাড়া প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে ঈদ বেড়ানো। প্রতি ঘরে ঘরেই সুস্বাদু নাস্তার আয়োজন। আমাদের ছেলেবেলায় নাস্তার আইটেম ছিল লাল সেমাইয়ের পোলাও, দুধ সেমাই, পেঁপের সেমাই। খেতে খেতে পেটে আর সয় না। দুধ সেমাই খাওয়ার মজাটাই ছিল আলাদা। খেতে না চাইলেও একটু মুখে দিতে হবে। আহা, মেহমানদের প্রতি কি আন্তরিকতা, মমতা। দিনভর চলতো ঈদ অতিথিদের আদর–আপ্যায়ন। গ্রামে এখনও শিশু–কিশোররা আমাদের সময়ের ঈদ আনন্দের ঐতিহ্য কিছুটা ধরে রাখলেও শহরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে তার প্রভাব নেই বললেই চলে। ঈদের দিন ওরা সময় পার করে মোবাইল, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ নিয়ে।