আনন্দ সাংস্কৃতিক অংগন, প্রতিষ্ঠা যার ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য তবলা বাদক, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত বিশেষ শিল্পী লিটন মিত্রের আন্তরিক চেষ্টা, মেধা, শ্রম ও ত্যাগের সম্মিলনে গড়ে উঠে এই সংগঠন। ১৯৮৫ সাল থেকে এখনো মঞ্চে তবলার বোলে যেমন ঝড় তুলে চলেছেন তিনি, তেমনি এ সংগঠনের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতু বন্ধন রচনায়ও তিনি অগ্রগামী।
দেশ-বিদেশের বরেণ্য শিল্পীরা তাঁর আমন্ত্রণে আনন্দ সাংস্কৃতিক অংগনের ব্যানারে এসেছেন, শ্রোতাদের মাতাতে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের উদীয়মান শিল্পীদের নিয়েও অনুষ্ঠান করে থাকে সংগঠনটি। লিটন মিত্র বলেন, চট্টগ্রামের সংগীতাংগনে আলাদা কিছু করার উদ্দেশ্য ছিল, যেখান থেকে তরুণ প্রজন্মের শিল্পী উঠে আসতে পারবে এবং তাদের চট্টগ্রাম সংগীতাঙ্গনে একটা নিজস্ব স্থান করে নেবে। আশা করি আমি সেটা করতে পেরেছি। তিনি আরেকটা চমকপ্রদ বিষয় উল্লেখ করেন যে, আনন্দ সাংস্কৃতিক অংগনের পজিটিভ দিক হলো সময়ানুবর্তিতা। আনন্দ সাংস্কিৃতক অংগনের প্রতিটা অনুষ্ঠান যথাসময়েই হয়ে থাকে।
সময়ের হেরফের হয় না। ২০০২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রতি এক/ দুই মাস অন্তর একটি করে মঞ্চ অনুষ্ঠান আয়োজন করে এই সংগঠন। উদ্দেশ্য হলো প্রবীণ শিল্পীদের পাশাপাশি নবীন শিল্পীদের মঞ্চে উপস্থাপন করা। এই পর্যন্ত আনন্দ সাংস্কৃতিক অংগনের আয়োজনে ১২৫টি অনুষ্ঠান হয়েছে। করোনাকালীন দুই বছর অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। এখন ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হওয়ায় আবারো নতুন নতুন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা চলছে। সামনে আশা করছি কিছু সুখবর আপনাদের দিতে পারব। আনন্দ সাংস্কৃতিক অংগন অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে এ দেশের গুণী ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান করেছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন কবি ও সাহিত্যিক মাহবুবউল আলম চৌধুরী, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ, কবিয়াল রমেশ শীল, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, আবু কাওয়াল প্রমুখ। এছাড়া ১১ টি উপজাতি নিয়ে সংগঠনটি অনুষ্ঠান করেছে। করেছে যিশুখৃষ্ট স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান। সংগঠনটির আহ্বানে চট্টগ্রামে এসেছেন বিখ্যাত সরোদ বাদক ওস্তাদ শাহদাত হোসেন খান, মুম্বাই থেকে রুদ্রবীণা (শিবের বাদ্যযন্ত্র) বাদক পণ্ডিত হিন্দরাজ দিবাকর, আগরতলা থেকে কত্থক নৃত্যশিল্পী রাহুল দেব, জনপ্রিয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্য, লোপামুদ্রা মিত্র, শুভমিতা ব্যানার্জি, ফেরদৌস আরা, সুবীর নন্দী, সৈয়দ আবদুল হাদী প্রমুখ। আনন্দ সাংস্কৃতিক অংগন তাদের নিয়মিত আয়োজনের পাশাপাশি ২০২০ সাল থেকে শুরু করেছে আনন্দ সাংস্কৃতিক অংগন সংগীত বিদ্যালয়, কদম মোবারক মসজিদ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। বর্তমানে সেখানে প্রতি সপ্তাহে তবলা, গান এবং স্প্যানিশ গিটারের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবলা প্রশিক্ষক লিটন মিত্র, গান প্রশিক্ষক তন্দ্রা সিংহ এবং গিটার প্রশিক্ষক সৌরভ দাশ।