ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে ৪০ শতাংশের বেশি টিকিট অবিক্রিত রয়ে গেছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে যাত্রীদের মাঝে ২৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়। বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে গিয়ে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে কিছু কিছু যাত্রী দেখা গেলেও বেলা ১২টা বাজতে বাজতে স্টেশন প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
বন্দর এলাকা থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের টিকিট নিতে এসেছেন সৈয়দ নূর। তিনি আজাদীকে জানান, ভেবেছিলাম টিকিট পাব না। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি একেবারে ফাঁকা। কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই টিকিট পেলাম। তিনটি টিকিট নিলাম।
এদিকে একটি শিপিং এজেন্সিতে চাকরি করেন নূর কালাম। তিনি সিলেট যাবেন। এজন্য অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছেন। তিনি আজাদীকে জানান, একেবারে ফাঁকা কাউন্টারে টিকিট পাবো ভাবিনি। প্রায় কাউন্টার ফাঁকা। ঝামেলা ছাড়াই টিকিট পেয়েছি, তাই ভালো লাগছে। এসময় বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ১৫-২০ জনের মতো যাত্রী সেহরি খেয়ে স্টেশনে চলে এসেছেন টিকিটের জন্য। তারা লাইনে সবার আগে ছিল। ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সাথে সাথে তারা টিকিট পেয়ে গেছেন।
আজ রোববার ২৪ তারিখে দেওয়া হবে ২৮ তারিখের অগ্রিম টিকিট, আগামীকাল ২৫ তারিখে দেওয়া হবে ২৯ তারিখের অগ্রিম টিকিট, ২৬ তারিখে দেওয়া হবে ৩০ তারিখের অগ্রিম টিকিট এবং ২৭ এপ্রিল দেওয়া হবে ১ মার্চের অগ্রিম টিকিট। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। কাউন্টারে দেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশ, বাকিগুলো অনলাইনে। একজন যাত্রী জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি জমা দিয়ে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট নিতে পারছেন।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে জানান, ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথমদিনে আমরা যাত্রীদের মাঝে ২৭ তারিখের টিকিট দিয়েছি। আজকে (শনিবার) প্রথম দিনে টিকিটের জন্য যাত্রীদের মধ্যে তেমন চাপ ছিল না। ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের ৭ হাজার টিকিটের মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রয়ে গেছে। আগামীকালও (রোববার) টিকিটের জন্য যাত্রীদের বেশি চাপ হবে না। ২৯, ৩০ ও ৩১ তারিখ চাপ বেশি হবে। যে কোনো যাত্রী টিকিট ক্রয় করতে চাইলে স্টেশনের কাউন্টারে গিয়ে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি মেইল ট্রেনের ২ হাজার টিকিটের মধ্যে ১ হাজার রয়ে গেছে। ঈদে প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। চাঁদপুর রুটে ২টি ঈদ স্পেশাল চলবে প্রতিদিন। আমাদের কাউন্টারে এবং অনলাইনে প্রচুর টিকিট আছে। যাত্রীরা নির্বিঘ্নে কিনতে পারবে।
সরেজমিনে স্টেশনে দেখা যায়, ১ থেকে ৮ নম্বর কাউন্টারে আলাদা আলাদা ট্রেনের টিকিট দেয়া হয়। এক নম্বর কাউন্টারে নারী, ওয়ারেন্ট ও রেলওয়ের পাস টিকিটের জন্য দেয়া হয়। ২ নম্বর কাউন্টারে সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এঙপ্রেস (স্নিগ্ধা ও শোভন চেয়ার), ৩ নম্বর কাউন্টারে পাহাড়িকা ও উদয়ন, ৪ নম্বর কাউন্টারে মহানগর গোধূলি ও মহানগর এঙপ্রেস, ৫ নম্বরে তূর্ণা এঙপ্রেস, ৬ নম্বর কাউন্টারে চট্টলা ও বিজয় এঙপ্রেস (স্নিগ্ধা, শোভন চেয়ার ও শোভন), ৭ নম্বর কাউন্টারে মেঘনা এঙপ্রেস এবং চাঁদপুর স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেয়া হয়। এছাড়াও বাকি কাউন্টারে অন্যান্য ট্রেনের টিকিটগুলো দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী আজাদীকে জানান, আমাদের ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের মোট ৭ হাজার ৩৪টি টিকিটের মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার টিকিট বিক্রির জন্য ওপেন ছিল। এর অর্ধেক কাউন্টারে এবং অর্ধেক অনলাইন। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। আজকে প্রথম দিনে কাউন্টারে তেমন কোনো চাপ ছিল না। কালকেও থাকবে না। পরশু থেকে চাপ বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, টিকিট কালোবাজারি রোধে সিসিটিভি ফুটেজ কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আমাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছে।












