নগরীতে তুচ্ছ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ ফাহিম (১৫) নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। একই ঘটনায় আহত হয়েছে ইমন (১৪) নামে আরও এক কিশোর। পাহাড়তলী থানাধীন ঈদগাঁও কাঁচা রাস্তার মোড়ে শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। ফাহিম হালিশহর মধ্যম রামপুর ধোপা পাড়ার বাসিন্দা মো. জহিরের ছেলে। মনসুরাবাদ গণপূর্ত বিদ্যানিকেতন থেকে অষ্টম শ্রেণী পাসের পর নবম শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল সে।
পুলিশ সূত্র জানা গেছে, স্থানীয় দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে ঈদবস্ত্র মেলা চলছে। মেলায় অভি ও ফেরদৌস নামে দুই কিশোরের একজনের গায়ে আরেকজনের ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় পরে নিজেরাই আপস মীমাংসার জন্য জড়ো হয়। সেখানেই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।
মেলায় ধাক্কাধাক্কির মতো তুচ্ছ ঘটনার জেরে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাহিমের সমবয়সী ৬/৭ জন বন্ধুকে থানায় আনা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) আরিফ হোসেন জানান, ঈদগাঁও কাঁচা রাস্তার মোড়ে দুলহান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে শুক্রবার সন্ধ্যার পর দুই দল কিশোরের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। সরে গিয়ে এক পক্ষ স্থানীয় একটি টং দোকানের সামনে অবস্থান নেয়। রাত ১১টার দিকে অপর পক্ষ সেখানে যাওয়ার পর পুনরায় ঝামেলা শুরু করে। এ সময় ফাহিমকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, ফাহিমের বাম হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। শুনেছি ছুরিকাঘাতের পর তার বন্ধুরা স্থানীয়ভাবে তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য কয়েকটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যায়। কিন্তু ফার্মেসিতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় রাত ১২টার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে আনার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন বলে নিশ্চিত করেন পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান। আহত ইমনকে ২৪ নং ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়া হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকের বরাতে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
ফাহিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফাহিমের বাবা মো. জহির একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজের মিস্ত্রি। এক ভাই, এক বোনের মাঝে ফাহিম ছোট। তার বড় বোন স্থানীয় একটি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। অন্যদিনের মতো শুক্রবারও রোজা রাখে ফাহিম। সন্ধ্যায় বাসায় ইফতার করে। ইফতারের পর গরম অনুভূত হচ্ছে জানিয়ে মাকে গোসলের কথা জানায়। গোসল সেরে তারাবির নামাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। নামাজ শেষে বাসায় ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু ফাহিম বাসায় ফিরেছে ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।
এ ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ফাহিমের মা শামীম আরা বেগম। মা-বোনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল আশপাশের বাতাস। গতকাল সন্ধ্যায় ফাহিমের লাশ দাফন সম্পন্ন করে পরিবার। ফাহিমের হত্যাকারীদের শাস্তি চান তার বাবা-মা। যদিও ছেলেকে কেন মারা হয়েছে সেটি তারা জানেন না।