আমাদের যুদ্ধ অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে

মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, আমরা সব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন তাদের পক্ষ নেবে না। ব্যবসায়ীরা যদি আজকে আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন তারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করবেন, কাল থেকে আমরা বাজারে অভিযানে যাব না।
গতকাল শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ‘রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এই সভার আয়োজন করে। তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনে ঘাটতিজনিত কারণে অস্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোক্তা সাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্য পণ্য ক্রয় করতে পারেন এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে। আমাদের সবার যুদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে যারা তিন টাকার লেবু একই মার্কেটে আট টাকায় বিক্রি করে। তেল মিল গেট থেকে ক্রয় করার পর প্রতিটি পর্যায়ে যারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে, তাদের বিরুদ্ধে। ভোক্তারা যাতে স্বস্তিতে থাকে সেজন্য আমাদের যা যা করার তা করব।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, রমজানে আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ টন ভোজ্যতেল লাগে। চাহিদার তুলনায় দেশে তেল থাকা সত্ত্বেও বাজার অস্থির হয়ে যায়। ১৬ মার্চ ডিউটি প্রত্যাহার করার আগেই কারা বাজার অস্থির করেছে তা অনুসন্ধান করেছি আমরা। খুচরা থেকে মিলার সবাই সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়েছে। রিফাইনারিগুলোতেও আমরা অভিযান চালিয়েছি। সেখানেও কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তবে এখন থেকে তারা আমাদের কথা দিয়েছে উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। সাপ্লাই অর্ডারে (এসও) দাম উল্লেখ থাকবে। এছাড়া এখন থেকে ডিলাররা ছাড়াও মিল গেট থেকে যে কেউ মিলের দামে ভোজ্যতেল কিনতে পারবে। পাশাপাশি আমরা একটি অ্যাপস করছি। যেখানে তেল আমদানি থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব তথ্যের লাইভ আপডেট থাকবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের আর কোনো মহাসড়কে ওজন স্কেল নেই। একমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই ওজন স্কেল স্থাপন করা হয়েছে। আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকটা মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। তারা মহাসড়ক রক্ষায় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করে থাকেন। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতি নদীর সেতুও রয়েছে। তবে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপনের যৌক্তিকতা আমিও দেখি না।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কোভিড মহামারির দুই বছর ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য সারা বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন নতুন করে লকডাউন দেয়ার কারণে তৈরি পোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রদানে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। চিটাগাং চেম্বারও প্রতি বছরের ন্যায় ভর্তুকিমূল্যে চাল, চিনি ইত্যাদি বিক্রয় করছে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা জরুরি। বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র মিল রয়েছে। কাজেই আমদানি উৎসাহিত করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানি করা যায়। এছাড়া ডিউটি স্তর সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমান সংকট কেটে যাবে।
তিনি বলেন, ঈদের ন্যায় উৎসবের প্রায় ৩-৬ মাস আগে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় করে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। পাইকারি ও খুচরা সব ক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা প্রকাশ এবং উভয়ের মধ্যে দামের পার্থক্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও প্রশাসনসহ সবার সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। ১৩ টন ওজন বাধ্যবাধকতার কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। মিল গেটে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয়সহ এসও, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে জোরদার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কাজ করার কথা জানান তিনি।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন, সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চেম্বার পরিচালক একেএম আক্‌তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান টুটুল, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সাবেক চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসএম গ্রুপ চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, আখতারুজ্জামান সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার সাবেরী, পুলিশ প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সায়েম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার, চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, সাকিফ আহমেদ সালাম, মো. ইফতেখার ফয়সাল, এসএম তাহসিন জোনায়েদ, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নাসিরুল আলম ফাহিম, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ, চেম্বারের সাবেক পরিচালক কামাল মোস্তফা ও আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহেদুল আলম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন ঘর, নতুন জীবনের স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধচট্টেশ্বরী-গোয়াছি বাগান হয়ে রাস্তা যাবে হাসপাতালে