মুহূর্তে পাল্টে ফেলে চোরাই মোবাইলের আইএমইআই

তামাকুমণ্ডি লেইন কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে শক্তিশালী চক্র ১১৭ সেট ও ৩ ল্যাপটপসহ গ্রেপ্তার ৩

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মাঠ পর্যায়ে মোবাইল চুরি করানো থেকে শুরু করে চোরাই মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর মুহূর্তে পাল্টে ফেলে সেটি বাজারজাত করা পর্যন্ত পুরো কাজটি পরিচালনা করে একটি চক্র। সুশৃঙ্খলাভাবে কর্পোরেট ধাঁচে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে তারা। কোন কারণে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন সম্ভব না হলে সে সব মোবাইল ফোন দীর্ঘদিন নিজেদের কাছে রেখে পরে বাজারে ছাড়ে চক্রের সদস্যরা।
গত বুধবার বিকেলে নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় সাজ্জাদ (২০) নামে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশি করে ৫টি মোবাইল সেট উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন একটি পেশাদার মোবাইল চোর চক্রের সন্ধান পেয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এর সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে আরও ১১২ টি চোরাই মোবাইল সেট ও আইএমইআই পরিবর্তনের সফটওয়্যার সংযুক্ত ৩টি ল্যাপটপসহ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ৩ জন হলেন, ফেনী সদরের নতুন বাজার এলাকার মো. সেলিমের ছেলে সাজ্জাদ (২০), সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের কবির আহমেদের ছেলে হাবীবুল্লাহ মিজবাহ (২৫) ও ফটিকছড়ির উত্তর ধুরংয়ের বদিউল আলমের ছেলে মো. রাশেদ (২০)।
সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আজাদীকে জানান, বছর দুয়েক আগে ভিভোর সার্ভিসিং সেন্টারে চাকরি করতেন
হাবীবুল্লাহ মিজবাহ (২৫)। কাজ করতে গিয়ে তিনি স্মার্টফোনের মোবাইলের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপেমেন্ট আইডেনটিটি) পরিবর্তনের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো আয়ত্ব করেন। এরপর চাকরিতে আর মন বসে নি। মাথায় খেলে যায় তার দুষ্টু বুদ্ধি। চাকরি সূত্রে অর্জিত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নগরীর তামাকুমণ্ডি লেইন কেন্দ্রীক মোবাইল চুরি ও চোরাই মোবাইল ফোন বেচাকেনার একটা শক্তিশালী চক্র গড়ে তুলেন হাবীবুল্লাহ মিজবাহ। তিনি আরও বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ এক মিনিটে তারা আইএমইআই পরিবর্তন করতে সক্ষম। আগে মোবাইল ছিনতাইয়ের পর তারা বাজারে বিক্রি করে দিতো। কিংবা চট্টগ্রামের বাইরেও বিক্রি করতো। এখন কমপক্ষে ছয় মাস সময় নিয়ে এসব মোবাইল বাজারে ছাড়ে। যাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি মোবাইলের আশা ছেড়ে দেয় কিংবা পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির আজাদীকে বলেন, বুধবার বিকেলে পুরাতন রেলস্টেশনে বাগদাদ হোটেলের গলিতে সাজ্জাদকে সন্দেহ হলে তাকে তল্লাশি করে কোতোয়ালী থানার এসআই মোমিনুল ও তার টিমের সদস্যরা। এসময় তার থেকে ৫টি মোবাইল সেট পান। জিজ্ঞাসাবাদে সাজ্জাদ আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে সিডিএ রয়েল প্লাজার ইনোভেটিভ ফোন কেয়ার থেকে সে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করিয়ে নেয়। আর ইনোভেটিভ ফোন কেয়ারের মালিক হাবিবুল্লাহ মিজবাহ ও তার কর্মচারী রাশেদ আইএমইআই নম্বরগুলো পরিবর্তন করে দেয়। এছাড়া যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের লক খুলে তা আবার বিক্রি করে দেয়। পরে আমরা অভিযান চালিয়ে হাবিবুল্লাহ মিজবাহ ও রাশেদকে আটক করি। এসময় তাদের দেয়া তথ্যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ১১৭টি মোবাইল সেট, আইএমইআই পরিবর্তনের সফটওয়্যার ইন্সটল করা তিনটি ল্যাপটপ জব্দ করি। তাৎক্ষনিক ভাবে হাবিবুল্লাহ মিজবাহ স্বীকার করে তারা কোনো মোবাইল বিক্রেতা নয়। মূলত তারা বিভিন্ন দোকানদার ও ব্যক্তি থেকে বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের চোরাই ও অপরাধ কর্মে ব্যবহৃত মোবাইল সেটগুলো সংগ্রহ করে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে অবৈধ উপায়ে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে ওই মোবাইলগুলো আসল মালিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নগরীর নামি-দামি শপিং সেন্টারে পুনরায় বিক্রি করে।
ওসি বলেন, এই চক্রে রিয়াজউদ্দিন বাজারের তামাকুমণ্ডি লেইনের হাসিনা হক শপিং সেন্টারের চৌধুরী ডট কম নামের দোকানের মালিক জয় চৌধুরীও (২৩) জড়িত আছেন বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা। জয় চৌধুরী এই চক্রের তিনজন আটক হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন। তার দোকানে তল্লাশি চালিয়ে চোরাই আরও ১০৪টি প্যাকেটবিহীন মোবাইল উদ্ধার করা হয়। সে সহ আরও অনেক দোকানদার বিভিন্ন চোর থেকে কম দামে মোবাইল কিনে হাবিবুল্লাহ মিজবাহর মাধ্যমে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাথরঘাটায় আ. লীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টা, মূল হোতা গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবছরে ৬৪ লাখ মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হচ্ছে