ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ! দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে যেকোনো ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ জয়ের দেখা পেল তারা। তাসকিন আহমেদের আগুনে ৫ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গিয়েছিল ১৫৪ রানে। এরপর লিটন দাসের ৪৮ রানের সাথে অধিনায়ক তামিম ইকবালের অপরাজিত ৮৭ রানের দারুণ ইনিংস। সব মিলিয়ে দাপুটে এক জয়ের মাধ্যমে সিরিজ জিতে নিলো টাইগাররা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি এখন সৌভাগ্যের উপলক্ষ। ২৫ মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে বৈশ্বিক ক্রীড়ায় সর্বোচ্চ সাফল্য-অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন। আকবর আলীদের হাত ধরে অর্জিত সেই সেরা সাফল্যে উদ্বুদ্ধ সিনিয়ররা এবার রচনা করেছে নতুন ইতিহাস।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে এই সিরিজের আগ পর্যন্ত ছিল না কোনো জয়। যদিও একটি ম্যাচ সেখানে জিতেছিল টাইগাররা। তবে সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপে। দীর্ঘদিন পর আবার সে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই টাইগাররা ভাঙল পরাজয়ের সে বৃত্ত। ঐতিহাসিক এক জয় তুলে নিয়ে সিরিজ শুরু করে তামিমের দল। দ্বিতীয় ম্যাচে পথ হারালেও শেষ ম্যাচে এসে ওস্তাদের মার শেষ রাতের মত বাংলাদেশ একেবারে খড় খুটোর মত উড়িয়ে দিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট, কন্ডিশন সবকিছুই সব সময় বাংলাদেশের প্রতিকূলে থাকে। তার উপর এই সিরিজের আগের সিরিজে ভারতের মত দলকে হোয়াইটওয়াশ করে একরকম উড়ছিল প্রোটিয়াসরা। তবে দাপুটে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ জানান দিল তারাও এখন বিশ্ব সেরাদের কাতারে। সিরিজের শেষ ম্যাচটি টাইগারদের জন্য বেশ কয়েকটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর মধ্যে একটি হলো পরিবারের পাঁচ সদস্য হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরও সাকিব ম্যাচটি না খেলে দেশে ফিরেননি। তাই সাকিবের জন্যও এই ম্যাচটি জিততে প্রতিজ্ঞ ছিল বাংলাদেশ দল।
দিনের শুরুতে টস জেতা ছাড়া সেঞ্চুরিয়নে স্বাগতিকদের পক্ষে আর কিছুই ছিল না। প্রথমে তাসকিন আগুনে পুড়ে ছারখার হওয়া প্রোটিয়াস বোলারদের পরের সেশনে কচু কাটা করেছেন তামিম। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার শুরুটা বেশ ভালই করেছিল। ডি কক এবং মালান মিলে ৪৬ রান যোগ করেন। এজুটি ভাঙ্গে মিরাজের ঘুর্নিতে। ১২ রান করা ডি কক ফিরেন মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর দলের তিন সেরা ব্যাটসম্যান ভিরান্নে, ডুসান এবং ভাবুমা ফিরেন সাকিব, তাসকিন এবং শরীফুলের শিকার হয়ে। দলের এই তিন সেরা তারকা মিলে যোগ করেন ১৫ রান। মালানের লড়াইও থামিয়ে দেন তাসকিন। স্বাগতিকদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করা মালান তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার। এরপর বাংলাদেশের এই পেসার ছড়ি ঘুরিয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যনাদের উপর। মাঝখানে ডেভিড মিলার এবং প্রিটোরিয়াস মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করলেও তাদের থামিয়ে দেন তাসকিন। মিলার ১৬ আর প্রিটোরিয়াস করেছেন ২০ রান। ইনিংসের প্রথম কয় ওভার বাদ দিলে সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাংলাদেশ দলের বোলাররা ক্রমশ ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে। বিশেষ করে তাসকিনের পেস আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় স্বাগতিক ব্যাটিং। কেশব মহারাজের ২৮ রান নাহলে হয়তো বড় লজ্জা পেতে হতো স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শেষ পর্যন্ত ১৫৪ রান করেছে স্বাগতিকরা।
স্বাগতিকদের ধ্বসিয়ে দেওয়ার পেছনে সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত নিয়েছেন ৫ উইকেট। ৯ ওভার বল করে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। সাকিব নিয়েছেন ২ উইকেট। ৯ ওভারে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ২৪ রান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন শরীফুল এবং মিরাজ।
১৫৫ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার তামিম এবং লিটন শুরু থেকেই কচু কাটা করতে থাকেন স্বাগতিক বোলারদের। তামিম শুরুতে কিছুটা ধীর স্থির থাকলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে ঝড় বইয়ে দিতে থাকেন প্রোটিয়াস বোলারদের উপর। দুজন ১২৭ রানের জুটি গড়েন ২০.৫ ওভারে। সিরিজের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি থেকে যখন মাত্র দুই রান দূরে ঠিক তখনই মহারাজের বলে ফিরেন লিটন। ৫৭ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৪৮ রান করেন এই ওপেনার। এরপর সাকিবকে নিয়ে দলকে ম্যাচ এবং সিরিজ জয় দুটোই উপহার দিয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। পুরো ২৩.৩ ওভার হাতে রেখে ইতিহাস গড়া এই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ৫২ বলে ৯টি চারের সাহায্যে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম অপরাজিত থাকেন ৮২ বলে ৮৭ রান করে। যেখানে তিনি ১৪টি চার মেরেছেন। আর সাকিব অপরাজিত ছিলেন ২০ বলে ১৮ রান করে। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন তাসকিন আহমেদ।












