নগর বিএনপির ৩১ নেতাকর্মীকে তলব করেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে বিদ্যমান কমিটিতে নেই এমন ১২ জনও রয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বিএনপির এক সহ-দপ্তর সম্পাদক আমন্ত্রিতদের মোবাইলে কল করে জানান, ‘২১ মার্চ বিকেল ৫টায় তাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপে কথা বলবেন। তাই ওইদিন দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে।’ তবে হঠাৎ কেন এ সংলাপ তা জানায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমন্ত্রিতদের নামের তালিকা লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পাঠিয়েছেন। যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের মধ্যে নগর বিএনপির বিদ্যমান আহ্বায়ক কমিটির আছেন মাত্র ১৯ জন। বর্তমান কমিটির আকার ৩৯ সদস্যর। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ওই হিসেবে আমন্ত্রণ পাননি ১৯ জন। আমন্ত্রণ না পাওয়াদের মধ্যে কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়কও রয়েছেন।
এদিকে আকস্মিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সংলাপ আহ্বান নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কেউ বলছেন, বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে আমন্ত্রিত ৩১ জনকে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে নতুন ১২ জনকে আমন্ত্রণ জানানোয় এ গুঞ্জন আরো জোরালো হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান কমিটি থেকে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ৩১ জনের তালিকা তারেক রহমান কীভাবে সংগ্রহ করেছে সেটা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
নতুনদের নিয়ে নানা অভিযোগ : বিএনপি নেতারা জানান, নতুন আমন্ত্রণ পাওয়াদের বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে দলের কর্মসূচিতে সক্রিয় নন। এর মধ্যে একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে অংশ নিয়ে দল থেকে একবার বহিষ্কৃতও হয়েছিলেন। একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিএনপির সমর্থনে কাউন্সিলর হয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন না। দুই বছর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্মদিন দিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার অভিযোগ আছে আরেকজনের বিরুদ্ধে। বছর খানেক আগে নগরের একটি থানায় গিয়ে ‘বিএনপি করব না’ বলে মুচলেকা দিয়েছেন এমন একজনও আছে আমন্ত্রিতের তালিকায়। মুচলেকা দেয়ার পর থেকে মহানগর দপ্তর থেকে দলের নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানালে ‘বিএনপি করি না’ বলে জানিয়ে দিত।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে স্কাইপ সংলাপ আছে। সে জন্য ডাকা হয়েছে। বর্তমান কমিটির অনেককে ডাকা হয়নি। আবার নতুন করেও অনেককে ডাকা হয়েছে। এমন কেন হয়েছে সেটা আগাম বলতে পারব না। ২১ তারিখ সংলাপের পর বুঝতে পারব। ‘স্থগিত থাকা থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কীনা’ জানতে চাইলে বলেন, ওইদিন সিদ্ধান্ত হবে।
সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে স্কাইপ সংলাপের জন্য কেন্দ্র থেকে ডাকা হয়েছে। ‘কী বিষয়ে আলোচনা হবে?’ প্রশ্নের জবাবে বলেন, সেটা তো অগ্রিম বলতে পারব না। তবে যেহেতু মহানগরের নেতাকর্মীদের ডাকা হয়েছে তাই ধারণা করছি মহানগরের সাংগঠনিক বিষয়ে কথা হবে। ডাক পাওয়া এস এম সাইফুল আলম বলেন, কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে কল করে ২১ মার্চ বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। কী জন্য ডাকা হয়েছে জানি না।
আমন্ত্রণ না পাওয়াদের মধ্যে নগর বিএনপির বিদ্যমান কমিটির সদস্য আবু সুফিয়ান দায়িত্ব পালন করছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে। তবে নগরে দলীয় কর্মসূচিতেও সরব থাকেন নিয়মিত। জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে বলেন, কে কে আমন্ত্রণ পেয়েছেন জানি না। ‘আপনি আমন্ত্রণ পেয়েছেন?’ এমন প্রশ্নে বলেন, আমি তো এখন দক্ষিণ জেলায় সম্পৃক্ত।
আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন চৌধুরী লিটন আজাদীকে বলেন, যেহেতু দল করি তাই দলের যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান আছে। আমন্ত্রণ না পাওয়া আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী সিরাজ উল্লাহ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় অবশ্যই দলের জন্য মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
কমিটি বিলুপ্ত হচ্ছে? : ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়। তাদের তিন মাসের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে করা সম্ভব হয়নি। ফলে ‘ব্যর্থতা’র দায় কাঁধে নিয়ে বর্তমান কমিটিকে বিদায় নিতে হবে কীনা সেই প্রশ্ন উঠেছে দলটির তৃণমূলে।
এদিকে গত জানুয়ারি মাসে নগর বিএনপির কার্যক্রম নিয়ে তিন দফা গোপন প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন তারেক রহমান। এর মধ্যে সর্বশেষ সংগ্রহ করা হয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের মাধ্যমে। তিনি গত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে টানা চারদিন চট্টগ্রাম অবস্থান করে থানা ও ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতকার্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। একই মাসের শুরুতে ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করও একটি গোপন প্রতিবেদন জমা দেন। এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রথম দফায় গোপন প্রতিবেদন জমা দেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, এস এম সাইফুল আলম ও নাজিমুর রহমান। গোপন প্রতিবেদনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই কমিটি বিলুপ্তের গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন প্রসঙ্গে নগর বিএনপি নেতারা বলেন, শুরুতে চসিক নির্বাচনের জন্য সম্ভব হয়নি। পরে কাউন্সিল করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৫টি থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড নিয়ে পর্যালোচনা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়। তবে ২৯ মার্চ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে আহ্বায়ক গ্রেপ্তার হলে সেটা থমকে যায়। তিনি সেপ্টেম্বর মাসে জামিনে বের হয়ে আবারো উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক কর্মী সমাবেশ শুরুও করে। ১৩ থানায় করার পর কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে আগে ওয়ার্ড কমিটি করতে হবে। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু হলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ ও মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন আটকে যায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন কার্যক্রমও।
বিদ্যমান কমিটির যারা আমন্ত্রণ পেলেন : বিদ্যমান কমিটির সদস্যদের মধ্যে আমন্ত্রিতরা হলেন ডা. শাহাদাত হোসেন, আবুল হাশেম বক্কর, আলহাজ্ব এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল, শাহ আলম, হারুন জামান, মোহাম্মদ আলী, নিয়াজ খান, ইকবাল চৌধুরী, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, আর ইউ চৌধুরী শাহীন ও এরশাদ উল্লাহ।
নতুন আমন্ত্রিত : বিদ্যমান কমিটিতে না থাকলেও যারা আমন্ত্রণ পান তারা হচ্ছেন একরামুল করিম, সাহাব উদ্দিন, এস এম জি আকবর, খোরশেদ আলম, ইসমাইল বালি, মজিবুল হক, আবদুস সাত্তার সেলিম, শেখ নূর উল্লাহ বাহার, সিহাব উদ্দিন মুবিন, মোহাম্মদ আজম, মনোয়ারা বেগম মনি ও মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন।
বাদ পড়লেন যারা : আবু সুফিয়ান, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, জয়নাল আবেদিন জিয়া, এস এম আবুল ফয়েজ, মাহাবুব আলম, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, নুরুল আলম রাজু, মনজুর আলম চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন লিপু, আবুল হাশেম, গাজী সিরাজ উল্লাহ, মনজুর আলম মনজু, কামরুল ইসলাম, আশরাফ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া ও শামছুল আলম।