প্রতি বছর রমজানের আগে ভোক্তাদের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিনা। বিশেষ করে প্রতি বছর রমজানের ঠিক আগ মূহূর্তে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দাম বৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। সেই সব বিষয় মাথায় রেখে ভোগ্যপণ্যের বাজারের বর্তমান অবস্থা ও মজুদ পরিস্থিতির বিষয়ে খাতুনগঞ্জের দুই ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছে দৈনিক আজাদী।
আবদুস সালাম
রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা নেই
মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। মজুদ পরিস্থিতি বাড়ার কারণে গত এক সপ্তাহে দামও কমতির দিকে। ব্যবসায়ীরা এখন ক্রেতার অপেক্ষায় দিন গুণছেন। মাঝখানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। বিশেষ করে ভোজ্যতেলের কথা বলতে হয়। তবে গত এক সপ্তাহের চিত্র কিন্তু উল্টো। সয়াবিন ও পাম তেলের দাম মণে ৭০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো ভোগ্যপণ্যের দাম চড়া। এটি শুধু দেশে বেড়েছে তা নয়। ভোগ্যপণ্যের বাজার নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমদানি খরচ বেশি পড়ে। তবে এখানে আরেকটি সমস্যা আছে। অনেক ব্যবসায়ী অন্য দেশে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সেই দামে এখানে ব্যবসা করতে চান। এটি আসলে প্রযুক্তির অপব্যবহার। ইন্টারনেটের কারণে সবাই এখন প্রতি মুহূর্তে দরদাম জানতে পারছেন। আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ার সাথে দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণে বাজারে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বর্তমানে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কোনো কারণে থেমে গেলে ভোগ্যপণ্যের দাম আরো কমে যাবে। সব মিলিয়ে আসছে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা খুব কম।
মো. মহিউদ্দিন
আগের চেয়ে এবার বেশি আমদানি হয়েছে
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, চলতি বছর রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা আগের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করেছেন। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর গুদাম এখন রমজানের পণ্য ছোলা, সাদা মটর, চিনি, মশুর ডাল, মুগ ডাল, চিড়া, খেঁজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে ভরপুর। এসব পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে না কমলেও আমাদের দেশের বাজারে কমে গেছে। আমদানি বেশি হওয়ায় এটি হয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো-খাতুনগঞ্জে দুই দিন ধরে পণ্য বেচাবিক্রি কমে গেছে। গত বছর করোনা প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ী পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করতে পারেননি। এ বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও স্বাচ্ছন্দে পণ্য আমদানি করতে পেরেছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে আগের মতো জাহাজ জট নেই।
এস এম নাজের হোসেন
সমন্বিত বাজার তদারকি নিশ্চিত করতে হবে
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের কোন ঘাটতি হবে না বলে আমদানিকারক ও সরকারের সংস্লিষ্ট দপ্তর থেকে বারবার বলা হচ্ছে। তবে পণ্যের সরবরাহে যদি কৃত্রিম সংকট না হয় এবং সরকার যদি আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন্ত তদারকি জোরদার করে তাহলে রমজানের সময় দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। ব্যবসায়ীরা প্রায়সময় চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে থাকেন। এভাবে তারা কিছুদিন আলু, কিছুদিন পেঁয়াজ নিয়ে খেলেন। সম্প্রতি যেমন সয়াবিন তেল বাড়তি দরে বিক্রি করে ক্রেতাদের পকেট কেটেছে। এসব সরকারের দায়িত্বশীল লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে বাজারে রেগুলেটরি অবস্থান নিশ্চিত করে মাঠ পর্যায়ে সরকারের সকলের সমন্বিত বাজার তদারকি নিশ্চিত করা। আমদানিকারক, উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বাজার তদারকি নিশ্চিত করা।