বাবা প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের শ্রাদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পিকআপ চাপায় গুরুতর আহত হয় সাত ভাই-বোন। তন্মধ্যে ছয় ভাই ইতোমধ্যে অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন। চাপা দেওয়া সাতজনের মধ্যে একমাত্র বোন হীরা শীল বেঁচে থাকলেও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তিনি গতকাল বুধবার মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার ডান পায়ে রড সংযোজনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
সেদিন ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান প্রয়াত সুরেশের সর্বকনিষ্ট সন্তান প্লাবন শীল এবং তার একবছরের বড় বোন মুন্নী শীল। মূলত প্লাবন ও মুন্নী সামান্য দূরে অবস্থান করায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পান। তবে ঘাতক পিকআপ বড় সাত ভাই-বোনকে চাপা দিয়ে যাওয়ার সেই ভয়াবহ ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন তারা।
গতকাল বুধবার দুপুরে বাড়িতে গেলে কথা হয় প্লাবনের সঙ্গে। এ সময় প্লাবন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমি স্বপ্ন দেখতাম ভবিষ্যতে বড় কিছু হব। ভাইদের আদর-স্নেহ ও সহায়তায় এবার ডুলাহাজারা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পাসও করেছি। ভবিষ্যতে যে পড়ালেখা করতে পারব সেই নিশ্চয়তা এখন আর নেই। কারণ আমার তো আর কোনো ভাই নেই। একা ফেলে চলে গেছে সবাই। প্লাবন বলেন, এইচএসসি পাসের বিপরীতে যদি আমার একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা হত, তাহলে পরিবারের হাল ধরতে পারতাম। এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তান প্লাবন শীলকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা কীভাবে করা যায়, সেই বিষয়টি আমরা বিবেচনায় রেখেছি। এছাড়াও নিহতদের স্ত্রীরাও যাতে ছোট-খাটো চাকরি করে কিছু একটা করতে পারে সেই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ : একটি দুর্ঘটনায় ছয় ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন কঙবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এ সময় ইউএনও জেপি দেওয়ান, এসি ল্যান্ড মো. রাহাত উজ-জামান, সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম, থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় কঙবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। এইজন্য উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে খোঁজ-খবর রাখতে। তিনি বলেন, ৮ ভাইয়ের এই পরিবারটি ভূমিহীন। তাই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের উপহার হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- ক্ষতিগ্রস্ত ৮ পরিবারকে আমরা খাস জায়গায় নতুন করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে পুনর্বাসনের। এজন্য আজ থেকে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করতে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডুলাহাজারা নাথপাড়ার পাশে সরকারি খাস জায়গায় একসঙ্গে ৮টি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। যাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সদস্যরা ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাই পায়।
এ ব্যাপারে চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে খাস জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে মাটি ভরাটসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।