অবুঝ শিশুরা জানে না তাদের বাবা কোথায়?

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ চাপায় নিহত ছয় ভাইয়ের মধ্যে একভাই নিঃসন্তান, বাকি পাঁচজনের রেখে যাওয়া উত্তরসূরিরা এখনো শিশু। দুনিয়ার কোনো কিছু বুঝে উঠার বয়স হয়নি এখনো তাদের। বাবা যে দুনিয়াতে নেই তা তাদের মাথার মধ্যেই নেই। যদিওবা এতবড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে মা বৃদ্ধা মৃণালিনী শীল এবং স্বামীহারা ছয় পুত্রবধূ, নিকটাত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীরা শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের শোকার্ত পরিবারে গেলে দেখা যায়, বাড়ির দক্ষিণ পাশের খোলা জায়গায় একসঙ্গে খেলছে বেশ কয়েকটি শিশু। তারা মাটি খুঁড়ে সেখানে পানি ঢেলে মনের আনন্দে খেলছিল। এ সময় একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছিল তারা। তাদের চোখেমুখে ছিল না কোনো ধরনের হতাশার ছাপ। কারণ তারা বুঝতেই পারছে না যে তাদের বাবারা আর এ ধরাধামে নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে মারা যাওয়া রক্তিম শীলের একমাত্র শিশুপুত্র ঋদ্ধি শীল। তাকে তার বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করা হলে বলে, আমার বাবা বেড়াতে গেছে। কিছুদিন পর আসবে বলে জানিয়েছে মা। রক্তিম শীলের স্ত্রী সুমনা শীল বলেন, ঋদ্ধি এখনো বুঝতে পারছে না তার বাবা আর নেই। সে বার বার বলছে- বাবা কখন আসবে। বাবাকে এনে দাও। আমি কিভাবে সান্ত্বনা দেব এ অবুঝ শিশুকে!
নিহত ছয় ভাই যথাক্রমে অনুপম শীল, রক্তিম শীল, নিরূপম শীল, চম্পক শীল, দীপক শীল, স্মরণ শীলের মধ্যে নিরূপমের কোনো সন্তান নেই। তার সংসারে শুধুমাত্র স্ত্রী গীতা শীলই আছেন। বাকি পাঁচ ভাইয়ের পরিবারের মধ্যে রয়েছে অনুপমের স্ত্রী পপী শীল, দুই সন্তান দেবশ্রী শীল (১৬) ও অর্ক শীল (১১); রক্তিমের স্ত্রী সুমনা শীল ও একমাত্র পুত্র ঋদ্ধি শীল (৬); দীপকের স্ত্রী মুন্নী শীল পূজা ও একমাত্র সন্তান আয়ুষ্মান শীল (৬); চম্পকের স্ত্রী দেবীকা শীল, দুই কন্যাসন্তান আয়ুশ্রী (৪) ও আদ্রিতা শীল (১৮ মাস); স্মরণের স্ত্রী তৃষ্ণা শীল, দুই সন্তান অভি শীল (৫) ও একমাস বয়সের শ্রীময়ী শীল। এছাড়াও রয়েছেন গত তিনবছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া হীরক শীলের দুই স্ত্রী শিল্পী রাণী শীল ও সাকী শীল। সেই সংসারে রয়েছে ষষ্ট শ্রেণি পড়ুয়া চন্দ্রিকা শীল তুর্কী, দ্বিতীয় শ্রেণির অনুষ্কা শীল পর্না ও তিন বছরের পুত্র অংকুষ শীল।
নিঃসন্তান নিরূপমের স্ত্রী গীতা শীল বলেন, আমাকে তো কিছুই দিয়ে যায়নি। অন্যদের ঘরে সন্তান থাকলেও আমার কিছুই নেই। এই দুনিয়াতে আমি বড় একা হয়ে গেছি, সেটি কাকে বুঝাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিডিএকে আইনজীবী সমিতির মুখোমুখি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধভাইদের হারিয়ে একা হয়ে পড়েছেন প্লাবন