বাড়ছে রডের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ লোহার দাম বৃদ্ধির জের ধরে দেশে রডের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানি ভেদে রডের দাম টন প্রতি ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। নির্মাণ নির্মাণ সামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পের গতিও থমকে যাবে। দেশে প্রচুর লোহা এবং স্ক্র্যাপের মজুদ থাকলেও রডের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্মাণ কাজের ভর মৌসুমে দাম বাড়তে থাকায় নির্মাতাদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ লোহার দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বেশ বৃদ্ধি পায়। স্ক্র্যাপ লোহার খনি হিসেবে স্বীকৃত পুরানো জাহাজের দাম টনপ্রতি ৩৫ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬শ’ ডলারে যে জাহাজ বিক্রি হচ্ছিল এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা ৬৩০/৬৩৫ ডলারে উন্নীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দেশে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে লোহার দাম বেড়ে গেছে। গতকাল সোমবার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে প্রতিটন স্ক্র্যাপ ৫৪ হাজার ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৫৩ হাজার ৩শ’ টাকা। গতকাল বাজারে কোম্পানি ভেদে রডের দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
এর আগে গত নভেম্বরে দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে প্রতি টন রড ৮১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। নভেম্বরে বাড়তে থাকা রডের দাম ডিসেম্বরে এসে কমতে থাকে। ৮১ হাজার টাকা থেকে কমে চলতি মাসের শুরতে দেশে রডের দাম ৭৬ হাজার টাকায় নেমে আসে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে রডের দাম আবারো বাড়তে শুরু করে। গতকাল ভালো মানের ৬০ গ্রেডের এক টন রড ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর আগে বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশে রডের দাম ৮০ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের সংকট দেখা দিয়েছে। পুরানো জাহাজই পাওয়া যাচ্ছে না। দু’চারটি জাহাজ পাওয়া গেলেও তা সিন্ডিকেট করে কেনাবেচা সম্পন্ন হচ্ছে। এতে বহু সাধারণ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক জাহাজই কিনতে পারছে না। সাধারণ জাহাজ মালিকদের কাছে স্ক্র্যাপ না থাকায় গুটিকয়েক ইয়ার্ড মালিক নিজেদের মতো করে স্ক্র্যাপের দাম নির্ধারণ এবং বিক্রি করছে। আবার ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার সাথে সাথে তা রডের বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। পুরানো স্ক্র্যাপ দিয়ে রড উৎপাদন করা হলেও বাজারে রডের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভালো মানের বা ৬০ গ্রেডের এক টন রড কোম্পানি ভেদে ৭৩ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে যা ৭১ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ৬০ গ্রেডের রড ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ৪০ গ্রেডের রড ১০ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
শুষ্ক মৌসুমে চারদিকে নির্মাণের মহাযজ্ঞ চলছে। এতে রডের ব্যবহার এবং চাহিদা বেড়েছে। বর্ধিত চাহিদার সুযোগ নিয়ে রডের দাম বাড়ানো হয়েছে বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
গতকাল একাধিক শিপ ব্রেকিং ব্যবসায়ী এবং স্টিল মিল মালিকের সাথে আলাপ করলে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধিতে রডের দাম বাড়ার জন্য দায়ী করেছে। পুরানো জাহাজের সরবরাহ এবং করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে রডের দাম আবারো কমে আসবে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।