চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সমঝোতা বৈঠকে ইউনিট সম্মেলনের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ৬ সদস্যের রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি নগরীর ১৪ থানা ও থানাধীন ওয়ার্ড সমূহকে সম্মেলন উপযোগী করতে মহানগর নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ছয় জন করে ১৪টি সাংগঠনিক টিম গঠনেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সভায়। ইউনিট সম্মেলন নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশের অভিযোগগুলো পর্যালোচনার জন্য সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের রিভিউ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এই রিভিউ কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ গুলো যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। রিভিউ কমিটি ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়গুলো উত্থাপন করবেন। তখন দলীয় সভাপতিই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমঝোতা বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
সভায় উপস্থিত নেতাদের বেশ কয়েকজন আজাদীকে জানান, নগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলন আপাতত হবে না। এখন ইউনিট সম্মেলন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনের পাশাপাশি ওয়ার্ড ও থানাগুলোকে সম্মেলনের উপযোগী করে তোলার জন্য ১৪ থানায় ১৪টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে থানাভিত্তিক টিম গুলো গঠন করতে হবে। এই টিমের সদস্যদের নেতৃত্বে আগামীতে ওয়ার্ড ও থানাগুলো হবে বলে জানা গেছে। তারা কিভাবে ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন করা যাবে-সেভাবে কাজ শুরু করবেন।
নগর আওয়ামী লীগের চলমান ইউনিট সম্মেলনের বিরোধ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে জানান, নগর আওয়ামী লীগের যেসব ইউনিটে সম্মেলন হয়েছে সেগুলো নিয়ে প্রচুর অভিযোগ। এই অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক পুনঃবিবেচনা জন্য কেন্দ্র আমার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে দিয়েছে। কমিটির অপর ৫ সদস্যরা হলেন, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সহ সভাপতি ও সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। সিটি মেয়র বলেন, আমরা ৬জন আগামী শুক্রবার বিকালে আমার বাসায় বসবো। আমাদের কাজ হলো-ইউনিট সম্মেলন নিয়ে যে অভিযোগগুলো উঠেছে সেগুলো তদন্ত করে রিভিউ করা। এখানে আমরা যেগুলো পারবো-সেগুলো সমাধান করবো। যেগুলো পারবোনা-সেগুলো কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দেবো। একই সাথে ১৪ থানা ও ওয়ার্ডের ব্যাপারে ১৪টি সাংগঠনিক টিম গঠনের জন্যও আমাদেরকে বলা হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সমন্বয়ে এই ১৪টি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির কাজ হবে-আমাদের অনেক থানায় সাংগঠনিক কাঠামো একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই থানা এবং ওয়ার্ডগুলোতে যাতে সম্মেলন করা যায়-সেই ভাবে উপযোগী করে তোলার জন্য তারা কাজ করবেন। এই সিদ্ধান্তেও যদি কাজ না হয়-তাহলে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ওয়ার্ড সম্মেলন আপাতত হবে না বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকের ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আজাদীকে বলেন, বৈঠকে ইউনিট সম্মেলনের নানান অনিয়মের বিষয়গুলো আমরা অভিযোগ তুলে ধরেছি। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের অভিযোগগুলো শুনেছেন। এখন আর যেনতেন ভাবে সম্মেলন করা যাবে না। সদস্য সংগ্রহ নিয়েও এখন আর লুকোচুরি করা যাবে না। সদস্য সংগ্রহ অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন-সদস্য সংগ্রহ ফরম যত দরকার হয় তত দিবেন। ওয়ার্ড সম্মেলন এখন হবে না। ওয়ার্ড সম্মেলন এবং থানা সম্মেলন করতে গেলে কি কি অসুবিধা সেগুলো আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে তুলে ধরেছি। আমাদের অনেক থানায় সাংগঠনিক কাঠামোই নেই। এই অবস্থায় ওয়ার্ড-থানা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন কিভাবে হবে-আমাদের আজকের অভিযোগ গুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন। প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন- ওয়ার্ড-থানা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন কিভাবে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের আরেক সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলন হওয়া যে ইউনিট কমিটিগুলোর ব্যাপারে অভিযোগ থাকবে সেগুলো পুনঃবিবেচনা করার জন্য ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে বসে মহানগর নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ১৪ থানায় ১৪টি মনিটরিং টিম গঠনের জন্যও বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ৬জন বসে কোন থানায় কারা কাজ করবেন তা নির্ধারণ করবেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন, সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, জহিরুল আলম দোভাষ, যুগ্ম সাধারণ সাধারণ ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও বদিউল আলম। অসুস্থ থাকায় ঢাকায় যেতে পারেননি নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. আফছারুল আমিন এমপি, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
তৃণমূলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নগর আওয়ামী লীগে পরস্পর বিরোধী দুটি ধারার বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এই ধারা দুটির মধ্যে একটির নেতৃত্বে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দীন এবং অপর বৃহৎ ধারাটি নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের। বর্তমানে এই ধারাটি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।