উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু শনিবার

দেয়া হবে ফাইজারের টিকা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা প্রয়োগের টার্গেট মনিটরিংয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ৭ সদস্যের কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় চট্টগ্রামে। গত ১৬ নভেম্বর থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এ টিকাদান শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় গত ৯ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত কেবল মহানগরের শিক্ষার্থীদের এ টিকা দেয়া হয়েছে। তবে এবার চট্টগ্রামের উপেজলা পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান শুরু হচ্ছে। আগামী শনিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী ও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ফরিদুল আলম হোসাইনী। যদিও সীতাকুন্ড উপজেলায় বৃহস্পতিবারই (আজ) শিক্ষার্থীদের এ টিকাদান শুরুর কথা জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার।
তিনি বলেন, সীতাকুন্ড উপজেলায় তিনটি কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তিনটি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার থেকেই শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হচ্ছে। অন্যান্য উপজেলায় শনিবার থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে কোনো উপজেলায় শনিবার শুরু করা সম্ভব না হলে সেখানে রোববার থেকে অবশ্যই টিকাদান শুরু হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় বলছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা সমন্বয়ের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। মহানগরের মতো উপজেলা পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা প্রয়োগ করা হবে।
জেলার ৭ লাখ শিক্ষার্থীকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকার আওতায় আনার টার্গেট : সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ (৮৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৪ জন)। এর মধ্যে ১২-১৭ বছর বয়সীদের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ (১০ লাখ ৯২ হাজার ৬৩৪ জন)। তবে এই বয়সীদের একটি অংশ স্কুল-কলেজের (পড়ালেখার) বাইরে রয়েছে। এই অংশটি বাদ দিলে জেলায় ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ বলে ধারণা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের। অবশ্য এর আগে মাউশিতে (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) পাঠানো তথ্যে মহানগরসহ জেলায় ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ বলে জানায় জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই বয়সী সব শিক্ষার্থীকে করোনার টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেলা শিক্ষা অফিস।
এ লক্ষ্যে উপজেলায় টিকাদান শুরুর পাশাপাশি মহানগরেও টিাকাদন কেন্দ্র বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মহানগরের ৫টি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের টিকাদান চলমান রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে আরো অন্তত ৫টি কেন্দ্র চালুর বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ফরিদুল আলম হোসাইনী। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে মহানগরের অন্তত দুটি কমিউনিটি সেন্টারে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কেন্দ্র করার কথা ভাবছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ বিষয়ে জেলাপ্রশাসনকে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে গেলে টিকা প্রয়োগের পরিসর বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ জন্য মহানগরে আমরা অন্তত দুটি কমিউনিটি সেন্টারে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কেন্দ্র করার প্রস্তাবনা দিয়েছি। একটি বন্দরের দিকে আরেকটি জিইসি বা মুরাদপুরের দিকে করা যায় কী না, সেটি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলাপ্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি।
জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরের মোট ৫২ হাজার ৭৯৬ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। এর মাঝে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১৫ হাজার ২৮৪ জন। আর ১২-১৭ বছর বয়সী ৩৭ হাজার ৫১২ জন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ নিয়েছে। প্রথম ডোজ গ্রহীতা এসব শিক্ষার্থীদের এখন ধাপে ধাপে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ চলছে।
মনিটরিংয়ে সাত সদস্যের কমিটি : ১২-১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম মনিটরিংয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। গতকাল বুধবার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এ কমিটির সভাপতি, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান সদস্য সচিব। আর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ওয়াজেদ চৌধুরী, এমও ডিসি ডা. মো. নুরুল হায়দার, এস আই এমও ডা. এ এফ এম জাহিদুল ইসলাম, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া, জেলা ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট হামিদ আলী এ কমিটির সদস্য। এ কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, মনিটরিংয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম গতিশীলকরণে এ কমিটি শিক্ষা বিভাগের সাথে সমন্বয় করবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের টিকাদানের পরিসর বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি উপজেলা থেকে সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীসহ ৭ জনের টিমকে ফাইজারের টিকাদানে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। ১৫ উপজেলা থেকে এসব টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রায় ৩০টি ভ্যাকসিনেটর টিম প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাধায়ক সুজন বড়ুয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন দুয়েকদিনেই
পরবর্তী নিবন্ধচকলেটের লোভ দেখিয়ে শিশু ধর্ষণ অভিযুক্ত আটক