রোটারিয়ান এবং মানবতাবাদী লেখিকা জেসমিন খান এর স্মৃতি রক্ষার্থে বাংলার বিজয় বছর লস এঞ্জলেস প্রতিবছর জেসমিন খান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেসমিন খান এওয়ার্ড প্রদান করে তাকে। লেখক, লেখিকা, সাংবাদিক ও সমাজ সেবিকাদের এই এওয়ার্ড দেয়া হয় প্রতিবছর। বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন “বাংলার বিজয় বছর” এই এওয়ার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে।
চলতি বছর এই এ্যাওয়ার্ড দেয় চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে। এরা হলেন ১. সমাজসেবায় ডঃ শহীদুল্লাহ খান (মরণোত্তর), ২. লিটিল বাংলাদেশ আন্দোলন ও সফল সংগঠক মজিব সিদ্দিকী ৩. লিটিল বাংলাদেশ বিউটিফিকেশন কাজী মশহুরুল হুদা ৪. অংক, বিজ্ঞান ও শিক্ষা জগতের নতুন তারকা প্রফেসর সুবর্ণ আইজ্যাক বারী ৫. বাংলা সাহিত্যের উপস্থাপনা মিঠুন চৌধুরী। এবারের এওয়ার্ডের বিশেষ বিবেচনা সুবর্ণ আইজ্যাক যে মাত্র ৯ বছর বয়সে জেসমিন খান এওয়ার্ড পেয়েছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান এই বালক এখনই হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছে। তাকে অংকের জাদুকর বা গড অব ম্যাথম্যাটিক বলা হয়। তার ভাষায় “অংক করতে আমার ক্যালকুলেটর লাগে না। ক্যালকুলেটরের চেয়ে দ্রুতগামী আমার ব্রেন” সূবর্ণর বাবা মা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। বাবা মায়ের সুবাদে সূবর্ণ এখন অল্প অল্প বাংলা বলতে পারে। মিঠুন চৌধুরী এক সময় বাংলাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক ছিলেন-৯০ এর দশকে আমেরিকা প্রবাসী হয়েছেন। সুস্থ ধারার বিনোদনের জন্য প্রবাসে উপস্থাপনা এবং বাংলা কবিতার আবৃত্তি করতেন। বাংলার বিজয় বছর নামের সংগঠনের উপস্থাপক হিসেবে মঞ্চ পরিচালনা করে আসছেন গত এক দশক ধরে। এছাড়া আনন্দ মেলা, বৈশাখী মেলাসহ বহু বড় বড় অনুষ্ঠানের ধারা ভাষ্যকার হিসেবে তার রয়েছে অসামান্য খ্যাতি। ইনি, চলতি বছর জেসমিন খান এওয়ার্ড পেয়েছেন প্রবাসে বাংলা ভাষা সাহিত্যের শুদ্ধ উচ্চারণ ও উপস্থাপনার জন্য।
কাজী মশহুরুল হুদা একজন মাইম আইকন। মূক অভিনেতা হিসেবে তার রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও সুনাম। দীর্ঘদিন বসবাস করছেন লস এঞ্জেলসের লিটিল বাংলাদেশ এলাকায়। ২০১০ সালে লিটিল বাংলাদেশ আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা, এখন লিটিল বাংলাদেশ এলাকায় বাংলাদেশী দেয়াল চিত্র নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছেন। শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য এসব অংকন করছেন লসএঞ্জেলেসের দেয়ালে দেয়ালে। সম্পূর্ণ নতুন ধারার বিউটিফিকেশন। প্রবাসে বাংলাদেশের মানচিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য তাকে এ বছর জেসমিন খান এওয়ার্ড ২০২১-এ ভূষিত করা হয়। জেসমিন খান এওয়ার্ড ২০২১ একটি মরণোত্তর এওয়ার্ড সংযোজিত হয় এ বছর। ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক সাইফুর ওসমান মিতুর প্রস্তাবে এ বছর মরণোত্তর এওয়ার্ড প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সমাজ সেবক প্রয়াত সাংবাদিক, লেখক ও সংগঠক শহীদুল্লাহ খানকে। শহীদুল্লাহ খান লসএঞ্জেলসে প্রথম বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংগঠিত করে ইঅখঅ বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অব লসএঞ্জেলেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৩০ বছর আগে। তার সেই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জেসমিন খান এওয়ার্ড ২০২১ কমিটি তাকে মরণোত্তর পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
২০১০ সালে লিটিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মজিব সিদ্দিকীর অসামান্য অবদানের কথা বিবেচনা করে জেসমিন খান এওয়ার্ড কমিটি ২০২১ জনাব মুজিব সিদ্দিকীকে জেসমিন খান এওয়ার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১০ সাল কোরিয়ান নেতা চ্যাংলী ও বাংলাদেশী নেতা জনাব মুজিব সিদ্দিকীর মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির কারণেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই অঞ্চলে কোরিয়ান টাউনের মাঝে লিটিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। লিটিল বাংলাদেশ অর্জনের ১২তম বর্ষে যদিও এই এওয়ার্ড প্রদান করা হয় তথাপি বলা যায় দেরীতে হলেও জেসমিন খান এওয়ার্ড কমিটি এক যুগ আগের সত্য ঘটনাকে আলোকিত করেছে তাদের এই মহতি মনোনয়নের মাধ্যমে।
এভাবেই জেসমিন এওয়ার্ড কমিটি দেশ ও প্রবাসের মধ্যে সাহিত্য, সমাজ সেবা ও সৃজনশীল কাজের বিশেষ অবদানের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের উৎসাহিত করে যাচ্ছে প্রতিবছর। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত যারা জেসমিন খান এওয়ার্ড পেয়েছেন তাঁরা হলেন সাংবাদিক সাইফুর ওসমানী মিতু সাংবাদিকতায়, কবি-কাজী জহিরুল ইসলাম কবিতায়, লেখক-এম ইসলাম মাসুদ কথা সাহিত্য-লেখক তপন দেবনাথ সমাজসেবা -কবি মাহবুব হাসান কবিতায়, অনলাইন একটি ভিস্ট-চমক হাসান-অংক বিশারদ, কাইরান কাজী-প্রতিভাবান শিশু, সাংবাদিক রাশেদ রউফ- সাহিত্য (বাংলা একাডেমিক পুরস্কার প্রাপ্ত), নজরুল গীতি এবং আধুনিক গানের জন্য ফাহমিদা রহমান এবং সমাজসেবায় চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক আবদুল হান্নানকে জেসমিন খান এওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।
জেসমিন খান ফাউন্ডেশন দেশে বিদেশে সমাজ সেবার মাধ্যমে প্রয়াত লেখিকার আদর্শকে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এবং এই কাজে সরকারি বেসরকারি কোন সাহায্য ছাড়াই জেসমিন খানের স্বামী-মোসলেম খান এবং তার সন্তানদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সকল দান-অনুদান ও সমাজসেবার কাজ সংগঠিত হয়। আমরা এমন মহৎ মনের মানুষের সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করি।
লেখক : ক্যালিফোর্নিয়া প্রবাসী গবেষক, চলচ্চিত্র পরিচালক।