উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। বাংলা ভাষার প্রথম শিশুসাহিত্যিক। বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক চিত্রকর, প্রকাশক, শখের জ্যোতির্বিদ, বেহালাবাদক ও সুরকার। তিনি সুকুমার রায়ের পিতা ও সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ। গুপি-গাইন-বাঘা-বাইন, টুনটুনির বই ইত্যাদি তারই অমর সৃষ্টি। উপেন্দ্রকিশোর জন্ম ১৮৬৩ সালের ১২ মে ময়মনসিংহ জেলার বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তার পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তার পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায় চৌধুরী তাকে দত্তক নেন ও নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে উপেন্দ্রকিশোর প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি পান। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে। একুশ বছর বয়সে বিএ পাস করে ছবি আঁকা শিখতে আরম্ভ করেন উপেন্দ্রকিশোর। এই সময় তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হওয়ায় তার অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটে। ছাত্র থাকাকালীনই তিনি ছোটোদের জন্যে লিখতে আরম্ভ করেন। সেই সময়কার সখা, সাথী, মুকুল ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত বালক নামে মাসিক পত্রিকাগুলিতে তার লেখা প্রকাশ হতে শুরু হয়। প্রথমদিকের (যেমন সখা, ১৮৮৩) প্রকাশিত লেখাগুলি ছিল জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ। তার পরে চিত্র অলঙ্করণযুক্ত গল্প প্রকাশিত হতে আরম্ভ হয়। লেখক হিসাবে লোকগাথার জন্য বিশেষ পরিচিতি ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর। ১৮৮৩ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম ম্যাগাজিন ‘সখা’। শিশুসাহিত্যই ছিল তার লেখনী সৃষ্টির মূল বিষয়। উপেন্দ্রকিশোরের হাতেই সৃষ্টি হয়েছে রাংলার প্রথম সুপারহিরো চরিত্র ‘গুপি গাইন ও বাঘা বাইন’। এই বাচ্চাদের গল্প নিয়ে উনার নাতি সত্যজিৎ রায় ২ টা সিনেমা করেছেন। তৃতীয় সিনেমাটা সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায় করেছেন। প্রথম সিনেমার কাহিনী উপেন্দ্রকিশোরের লেখা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিনেমার কাহিনী লিখেছেন সত্যজিৎ রায়। তার বিখ্যাত কিশোর সাহিত্য পত্রিকা ‘সন্দেশ’। বিজ্ঞান সম্বলিত তার সেরা দু’টি ক্লাসিকস ‘সেকালের কথা’ ও ‘আকাশের কথা’। ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোর প্রকাশ করেন ছোটদের জন্য সন্দেশ পত্রিকা। এই সন্দেশ পত্রিকা রীতিমত কীংবদন্তী বলা যায়। সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল ও পাগলা দাশু’, সত্যজিৎ রায়ের রচিত ‘ ফেলুদা ও প্রোফেসর শঙ্কু’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের অমর চরিত্র ‘ঘনাদা’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টেনিদা’ ইত্যাদি বাংলা শিশুসাহিত্যের কীংবদন্তী চরিত্রগুলো সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯১৫ সালের ২০ শে ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।