চট্টগ্রামের ১৭৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। গতকাল সকালে নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী।
মেয়র বলেন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের যদি আমরা সংবর্ধনা না দিই তাহলে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে না। এতে করে প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। সামনে হয়ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। কারণ সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে। এ বছর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী, আবার মুজিব শতবর্ষও। এমন মুহূর্তে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দিতে পেরে আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, লেখক ও ইতিহাসবিদদের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে যুদ্ধকালীন স্থানীয় বিভিন্ন কার্যক্রম, অপারেশন ও যুদ্ধের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে গেলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধসহ সবকিছুতেই চট্টগ্রাম অগ্রগামী মন্তব্য করে মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই চট্টগ্রাম থেকে তৎকালীন ইপিআরের ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা হয়। পরদিন কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতীম দেশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ভারত সরকার। প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ভারতের মিত্রবাহিনীও সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের যৌথ আত্মত্যাগে আজকের স্বাধীন দেশ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারত সরকারের আন্তরিক সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানেও দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক অটুট রয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব ডা. জাফরউল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন বাবুল, কাউন্সিলর আফরোজা কালাম, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম।
মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম চলমান রয়েছে। আর এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বাঙালি জাতি ভাষার জন্য লড়াই করেছে। অথচ এখনো সর্বস্তরে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন হয়নি। শহরের অনেক সাইনবোর্ডে এখনো ইংরেজি ভাষা দেখা যায়। সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা নিশ্চিতে মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমরা অর্থ চাই না, জমি চাই না, চাই শুধু সম্মান। বেঁচে থাকতেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দেয়া হোক।
যেসব অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এখনো ঘর পায়নি তাদের বাড়ি বানিয়ে দিতে সিটি মেয়রের সহযোগিতা চান মোজাফফর আহমদ।
সংবর্ধিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেক প্রয়াত রয়েছেন। তাদের পক্ষে পরিরবারের সদস্যরা সম্মাননা গ্রহণ করেন। সংবর্ধিতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন এম এ মান্নান, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান খান কায়সার, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, আবু সালেহ, মোছলেম উদ্দীন আহমদ, সুলতানুল কবির চৌধুরী, মৌলভী সৈয়দ, এস এম ইউছুফ, ডা. মাহাফুজুর রহমান, শওকত হাফিজ খান রুশ্নি, শহীদ মুরিদুল আলম, ডা. মো. ইউছুফ, শামসুদ্দীন আহম্মদ, মোজাফ্ফর আহমদ, এম এন ইসলাম, নাসিরুদ্দীন চৌধুরী, ডা. মুলকুতুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, ডা. জাফরুল্লাহ, শামসুদ্দীন আহমদ, শফর আলী, বদিউল আলম, স্বপন আচার্য, সৌরন্দ্র সেন, মো ইসহাক, মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, কমরেড শাহ আলম, শাহজাহান ইসলামাবাদী, মোহাম্মদ ইদ্রিস, আবু জাফর, ইদ্রিস আলম, বুলবুল গুহ, আবদুল মতিন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল হারুন, মোক্তার আহমদ, কফিল উদ্দীন, সেকান্দার হোসেন খান।