গত ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন হয় চট্টগ্রামে। টিকাদান শুরুর পর সাড়ে দশ মাসে (১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত) মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার সাড়ে ২৪ লাখ মানুষ (২৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৬৬ জন) দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন। হিসেবে চট্টগ্রামের মোট নিবন্ধনধারীর ৬০ ভাগই দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন (এ পর্যন্ত নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ৪১ লাখের কিছু বেশি)। এছাড়া এক ডোজ টিকা পেয়েছেন সাড়ে ৩১ লাখের কিছু বেশি (৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৬ জন)। তবে ৯ লক্ষাধিক নিবন্ধনধারী এখনো টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা এক ডোজও পাননি। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য, নিবন্ধন ছাড়া চট্টগ্রামের সাড়ে চার লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের ৩০০ ও বেদে জনগোষ্ঠীর ২০০ জনকে নিবন্ধন ছাড়া টিকা দেয়া হয়েছে। আর বাকি সব গার্মেন্টস কর্মী। গার্মেন্টস কর্মীদের টিকা প্রয়োগ এখনো চলমান আছে। সে হিসেবে নিবন্ধনহীন সহ প্রথম ডোজ টিকা গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬ লাখের কিছু বেশি (৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৬ জন)। তবে নিবন্ধনধারীদের মাঝে ৯ লাখের বেশি মানুষ এখনো টিকার কোন ডোজ পাননি। এর মাঝেই দেশে টিকার বুস্টার ডোজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। আগে দুই ডোজ গ্রহীতাদের মাঝে ষাটোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির যোদ্ধাদের প্রথমে বুস্টার ডোজ প্রয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রী। গতকাল ঢাকার একটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক ভাবে এই বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়। যদিও চট্টগ্রামে বুস্টার ডোজ শুরুর বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি আজাদীকে বলেন, আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বুস্টার ডোজ শুরুর সময় ও প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশনা এখনো পাইনি। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১১টি ও উপজেলাগুলোর ১৪টি স্থায়ী কেন্দ্রে এ টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা দিয়ে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন হয় চট্টগ্রামে। তবে পরবর্তীতে মডার্না এবং সিনোফার্মের টিকাও আসে। এখন ফাইজারের টিকা প্রয়োগও চলছে। ঢাকা থেকে এ পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯ হাজার ২০০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, এর মাঝে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৬০ লাখ ৮১ হাজার ৯১২ ডোজ টিকার প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মাঝে সাড়ে ২৪ লাখের বেশি মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। আর এক ডোজ পেয়েছেন ৩৬ লাখের বেশি টিকা গ্রহীতা। বর্তমানে আরো সাড়ে চার লাখ ডোজ টিকা ইপিআই স্টোরে মজুদ রয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।
নিবন্ধন ৪১ লক্ষাধিক : টিকা গ্রহণে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের মোট ৪১ লাখ ১ হাজার ৭৭৯ জন মানুষ সুরক্ষা প্লাটফর্মে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মহানগরের বাসিন্দা ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮০১ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ২৪ লাখ ৬১ হাজার ৯৭৮ জন।
টিকার অপেক্ষায় ৯ লাখের বেশি নিবন্ধনকারী : চট্টগ্রামে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৪১ লাখের বেশি মানুষ। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনধারীদের মাঝে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৬ জন নিবন্ধনধারী টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। হিসেবে অনলাইনে নিবন্ধন করে ৯ লাখের বেশি মানুষ এ পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও নিবন্ধনধারীদের মাঝে সাড়ে ২৪ লাখের বেশি মানুষ দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন। হিসেবে চট্টগ্রামের মোট নিবন্ধনধারীর ৬০ ভাগই দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।
টিকা প্রাপ্তি ও মজুদের তথ্য : সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত (১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সবমিলিয়ে ৬৯ লাখ ৯ হাজার ২০০ ডোজ টিকা পেয়েছে চট্টগ্রাম। এর মাঝে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯০ ডোজ, সিনোফার্মের ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫০ ডোজ, মডার্নার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ ডোজ এবং ফাইজারের ২ লাখ ৯০ হাজার ১৬০ ডোজ টিকা এসেছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ১ লাখ ৩৪ হাজার ১০ ডোজ, সিনোফার্মের ২ লাখ ২১ হাজার ৬৬৫ ডোজ, মডার্নার ৭০০ ডোজ এবং ফাইজারের ৯৪ হাজার ৭২৪ ডোজ টিকা বর্তমানে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে মুজদ রয়েছে। সবমিলিয়ে মজুদ ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৯ ডোজ টিকা বর্তমানে মজুদ রয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
টিকা প্রয়োগের গতি বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, নির্দেশনা অনুসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বেশ কয়টি কেন্দ্রে বুথ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগে নার্সের কিছুটা সংকট ছিল। সমপ্রতি নতুনভাবে বেশ কিছু নার্স যোগদান করেছে। তাদের মধ্য থেকেও এখন টিকাদানে নিয়োজিত করা যাবে।