স্কুল জীবনের কথা মাঝে মাঝে মনে উঠলে স্মৃতিকাতরতায় ভুগি। মনে পড়ে, দু’কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকাটা ছিলো ছাত্রদের জন্য একটা অপমানকর শাস্তি। এ শাস্তিটা শিক্ষক দিতেন যারা হোম টাস্ক করে আনতো না। আমি একদিন শিক্ষককে বললাম, ‘স্যার আমিও বেঞ্চে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো’। তিনি হেসে বললেন, ভালো ছেলেদের এ শাস্তি দেওয়া হয়না। স্যারকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারলামনা যে, এটা আমার জন্য আনন্দের ব্যাপার। আমার জীবনের একটা বড় দুঃখ হলো আমি কখনো কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়িয়ে শাস্তিভোগ করিনি। এক সময় আমার এক পকেটমারের সাথে পরিচয় ঘটেছিলো। সে আমাকে তার পকেটমার জীবনের কাহিনি শোনাতো। তার কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারতাম, সে খুব সরল। আমার তাকে ভালো লাগতো। পকেটমার ব্যক্তিটি একদিন আমাকে বললো, অনেকদিন ধরে জেলে যেতে পারছি না বলে আমার মন খুব খারাপ। আমি বললাম, এটা তো শাস্তি ভোগের জায়গা। সে বললো এটা তার জন্য শাস্তির জায়গা নয় – স্বস্তির জায়গা। আমাদের পাড়ায় এক ভদ্রলোক ছিলেন তিনি রাতে মদ খেয়ে এসে তার বউকে পিটাতেন। পিটাতে পিটাতে বলতো, তুমি আমাকে মদ খাওয়া ছেড়ে দিতে বলো বলে তোমাকে আমি পিটাই। এটা তোমার শাস্তি। একদিন হঠাৎ শুনলাম যে মদখোর ব্যক্তিটি মারা গেছেন। তার স্ত্রী আমাদের বাসায় মাঝে মাঝে এসে আমার স্ত্রী’র সাথে গল্প করতো। ড্রইং রুম থেকে একদিন শুনলাম তিনি আমার স্ত্রীকে বলছেন, স্বামীর পিটুনি যখন খেতেন তখন তার রাতে ভালো ঘুম হতো। এখন হয় না। আমার স্ত্রী বললো, পিটুনি দিয়েতো তোমার স্বামী তোমাকে শাস্তি দিতো। সে বললো এটা তার জন্য এখন সুখকর স্মৃতি। ছেলেবেলায় মা আমাকে বলতেন স্বর্গে গেলে নাকি যা খুশি তাই খাওয়া যায়। আমি মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসতাম। রাত্রে স্বপ্নে দেখলাম আমি স্বর্গে এসেছি। খেতে চাইলাম রসগোল্লা। রসগোল্লা আসছে তো আসছেই। পেট পুরে খেলাম। শেষে আর পারলাম না। রসগোল্লা খাওয়াটা তখন আমার জন্য হয়ে উঠলো একটা বড় শাস্তি। আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, আমি আর রসগোল্লা খেতে চাই না। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো। আমরা জানি চরম শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড। কিন্তু আমি মনে করি অপরাধীরা তো এ-দন্ড ভোগের সুযোগই পায়না। মুহুর্তেই তার মৃত্যু ঘটে যায়। এর চেয়ে বরং তাদের সারা শরীরে ঘা সৃষ্টি করে সেই কাটা ঘায়ে লবণ মাখিয়ে দিলে সে দুঃসহ জ্বালা যন্ত্রণা তিলে তিলে ভোগ করবে। এই শাস্তি ভোগ করবে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদকাল পর্যন্ত। এরপর মুক্তি পাবে। এতে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। তুলে দেওয়া হোক মৃত্যুদন্ড এবং আমৃত্যু দন্ডের শাস্তি। এক সময় দেশে নিশ্চয়ই কারাগার থাকবে না। থাকবে শুধু সংশোধনাগার।











