মীরসরাইয়ে রঞ্জন রায় নামের এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য বাড়ছেই। ঘটনায় গ্রেপ্তার বাদশাহ নামের অপর এক যুবকের ২৬ মাস পর কারামুক্তির পর তা আরও ডালপালা বেধেছে। সিআইডির পক্ষ থেকে আদালতে দেওয়া একটি ডিএনএ প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই গত ১০ নভেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে বাদশাহ জামিনে মুক্তি পায়। চার্জশিট বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন।
সিআইডির সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রঞ্জন রায়কে অপহরণ কিংবা খুন কোনোটায় করা হয়নি। ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পরবর্তীতে তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কোনো দাবিদার না থাকায় ময়নাতদন্তের পর তাকে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম দাফন করেন। এ ঘটনায় তখন মীরসরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রঞ্জনের ছবিসহ এ বিষয়ে মীরসরাই থানার অনলাইন পেইজে তথ্যও রয়েছে। এসব তথ্য পরবর্তীতে মামলার বাদী ও রঞ্জনের বাবাকে দেখানো হলে তিনি রঞ্জনকে শনাক্তও করেন। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ও আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত রঞ্জনের সাথে তার মায়ের ডিএনএ মিলে যায়।
বাদশাহর আইনজীবী উমা দাশ আজাদীকে বলেন, রঞ্জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে মীরসরাই থানায় তার পরিবার একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যেটি পরবর্তীতে অপহরণ ও হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। একপর্যায়ে আমার মক্কেল রিকশা চালক বাদশাহ ও অপর একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নির্যাতনের মুখে বাদশার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নেয়া হয়। পুলিশের ভুলে ২৬ মাস কারাভোগ করতে হলো তাকে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হওয়া সাধারণ ডায়েরি ও রঞ্জন রায়ের পরিবারের করা সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন মীরসরাই থানার এসআই তাপস চন্দ্র মিত্র। ভিকটিম যে একজন তিনি তা বুঝতেই পারেননি। ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন উল্লেখ করে উমা দাশ বলেন, আশা করছি খুব দ্রুত মামলাটি শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে এসআই তাপস চন্দ্র মিত্র ফোন রিসিভ করলেও কথা বলেননি।
আদালতসূত্র জানায়, সিআইডির পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা ডিএনএ প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করলে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে সিআইডির পরিদর্শক মো. শরীফ মামলাটি পুনঃ তদন্ত করছেন। তিনি আজাদীকে বলেন, সপ্তাহ দুয়েক হয়েছে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। সবকিছু দেখব। বিচার বিশ্লেষণ করব। এরপর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব। আগের তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক মোজাহেদুল হাসান বলেন, আদালতের নির্দেশে থানা পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার পেয়ে তদন্ত শুরু করেছিলাম। তদন্তে উঠে আসে একটি সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়। যেটি মীরসরাই থানার অনলাইন পেইজে সংরক্ষিত আছে। মূলত অনলাইন পেইজে থাকা একটি ছবি বলে দেয়, রঞ্জনকে কেউ খুন বা অপহরণ করেননি। রঞ্জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। যাহোক, এখন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। এখন সবকিছু তিনিই দেখবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট রঞ্জন রায়ের পিতা জ্যোতিশ চন্দ্র রায় মীরসরাই থানায় দিপু রায় নামের একজনকে আসামি করে অপহরণের পর হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, রঞ্জন রায় এবং দিপু রায় মীরসরাইয়ে একসাথে থাকতেন। দু’জনই রাজমিস্ত্রীর লেবার হিসেবে মীরসরাই এলাকায় কাজ করতেন। এপ্রিল মাসেই ঠাকুরগাঁওয়ের দিপু রায়ের ডাকেই মূলত দিনাজপুর থেকে মীরসরাই আসে রঞ্জন রায়। এজহারে আরো উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে ২৬ জুলাই রঞ্জন রায়ের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কয়েকদিন পর দিপু রায় জানান, তার ছেলে রঞ্জন রায় হারিয়ে গেছে।
এদিকে রঞ্জন রায়ের মা পার্বতী রাণী রায় আজাদীকে বলেন, আমার ছেলে রঞ্জন রায়কে ঔষধ কোম্পানির চাকরির কথা বলে চট্টগ্রামে নিয়ে যায় দিপু। দিপু আমাদের কাছাকাছি এলাকার ছেলে। কি হয়েছে, কি হচ্ছে তার কিছুই বলতে পারব না। তবে আমার ছেলের মৃত্যুর পেছনে দিপুর হাত রয়েছে তা একদম পরিস্কার। সে যাহোক, আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাব সেটিই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা।