চর কেটে কর্ণফুলীর গতিপথ ঠিক রাখার চেষ্টা

শাহ আমানত সেতুর পিলারের কারণে ৫ লাখ ঘনমিটার বেশি বালি ও মাটি উত্তোলন করতে হচ্ছে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর পিলারের কারণেই নদী থেকে পাঁচ লাখ ঘনমিটারের বেশি বালি ও মাটি উত্তোলন করতে হচ্ছে। পিলারের কারণে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় একটি চর কেটে নদীর গতিপথ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেতুর পিলারের কাছে ড্রেজিং করার সুয়োগ না থাকায় বারবার এই চর তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শাহ আমানত সেতুর কাছ ঘেঁষে বড় একটি চর জেগে উঠেছে। এই চর বড় হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সেতুর পিলারকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই চরের কারণে কর্ণফুলীর চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নদী ভরাট ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে অন্তত ৫ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলন করতে হবে। চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ থেকে শুরু করে শাহ আমানত সেতুর পিলারের দুইশ মিটার আগ পর্যন্ত চরটি পুরোপুরি কেটে তুলে আনা হবে। পিলার থেকে দুইশ মিটার পর্যন্ত চরটি বিদ্যমান থাকবে। চরের ওই অংশটি কাটার ওপর আইনগত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। চরের এই অংশটি পরবর্তীতে আবারো সম্প্রসারিত হয়ে নতুন করে হুমকি তৈরি করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, জোয়ার-ভাটার কর্ণফুলী নদীর চরিত্র হচ্ছে ভরাট করা। এই নদীর ভরাট হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। অল্প সময়ে নদীতে জেগে ওঠে চর। একটি খুঁটি পুতে রাখলেও তা ঘিরে তৈরি হতে থাকে বালুচর। নদীর এই চরিত্রের কারণে প্রতি দশ বছর পর এখানে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প পরিচালনার পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু নানা জটিলতায় সময়মতো ড্রেজিং হয়নি। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়া এবং ড্রেজিংয়ের নামে নদীর বিভিন্ন অংশ ভরাট এবং বালি বিক্রি করার কারণে হুমকির মুখে পড়ে কর্ণফুলী।
একটি প্রকল্প বাতিল হওয়ার পর পরবর্তীতে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ নামের পৃথক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে নদী থেকে ৪২ লাখ ঘনমিটার বালি ও মাটি উত্তোলনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটির আওতায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার চওড়া এলাকায় ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। ডিপিএম পদ্ধতিতে নৌবাহিনীর মাধ্যমে চীনা কোম্পানি ই-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
শুরুতে ৪২ লাখ ঘনমিটার মাটি তোলার কথা থাকলেও পরবর্তীতে এই প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের বিটিআরসির বিশেষজ্ঞ টিম ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলনের মতামত দেয়। এতে প্রকল্প ব্যয় ৬৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০২ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী নদী থেকে ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গতকাল পর্যন্ত নদী থেকে ২৯ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলিত হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫৯ শতাংশ।
নদী থেকে মাটি ও বালি উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে শাহ আমানত সেতুর পিলারকে ঘিরে। সেতুর উত্তর পাশের পিলার ঘিরে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এই চর থেকে অন্তত পাঁচ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলন করতে হবে। এই চর চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালের মুখসহ সন্নিহিত এলাকা ভরাট করে ফেলেছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে এই চর কাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জেগে ওঠা চর কাটার কার্যক্রম শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত চরটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলেছে, সেতুর পিলারের দুইশ মিটারের মধ্যে ড্রেজিং করা যাবে না। এতে করে পিলার ঘিরে চর থেকেই যাবে। নদীর যে চরিত্র তাতে ওই চরকে ঘিরে ভবিষ্যতে আবারো চর জাগতে পারে। সেতু ঝুলন্ত হলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ বলেন, আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। নদী থেকে ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলন করব। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমাদের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। নদীর যেসব এলাকায় ড্রেজিং করা হয়েছে সেখানকার পরিস্থিতি ভালো। শাহ আমানত সেতুর পিলার ঘিরে জেগে ওঠা চর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের বাড়তি খরচের পাশাপাশি নদীর জন্যও হুমকি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএতবড় অমানবিক যে, তাকেও মানবতা দেখিয়েছি
পরবর্তী নিবন্ধআগ্রাবাদ সার্কেলের ৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা