আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দেখতে পাবে বিশ্ববাসী। কারণ অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ড কেউই আগে এ ফরম্যাটে বিশ্বকাপ জিতেনি। গতকাল ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। নতুন রেকর্ড গড়েই শিরোপা ঘরে তুলেছে অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৭২ রান। যা ছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। শিরোপা জেতার পথে নতুন রেকর্ড গড়ে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৮.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রেখেছেন তিন নম্বরে নামা ডানহাতি ব্যাটার মিচেল মার্শ। তার ব্যাট থেকে আসে ৫০ বলে ৭৭ রান। বাঁহাতি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার খেলেছেন ৩৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩২ বলে ফিফটি করে বিশ্বকাপ ফাইনালে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েছিলেন কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। রান তাড়া করতে নেমে ৩১ বলে ফিফটি করে সেই রেকর্ড নিজের করে নেন মিচেল মার্শ। তার ৭৭ রানের ইনিংসের সুবাদেই মূলত সাত বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের ইনিংসের ১৯তম ওভারের পঞ্চম বল রিভার্স স্কুপে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন গ্লেন ম্যাঙওয়েল। তিনি অপরাজিত ছিলেন ১৮ বলে ২৮ রান করে। অথচ শুরুতেই অধিনায়কের বিদায়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের করা ১৭২ রানের সংগ্রহটি তখন মনে হচ্ছিল বেশ কঠিন। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দারুণভাবে অস্ট্রেলিয়দের ম্যাচে রাখেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও তিন নম্বরে নামা মিচেল মার্শ। ১৭৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারে বোল্টের বিপক্ষে কোনো জবাবই খুঁজে পাননি ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। প্রথম ওভারে আসে মাত্র ১ রান। টিম সাউদির করা দ্বিতীয় ওভারে দুই চারের মারে ১০ রান তুলে নেন ওয়ার্নার। তার দেখাদেখি বোল্টের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মারেন ফিঞ্চ। কিন্তু পরের বলেই তার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেন বোল্ট। ডিপ মিড উইকেটে বেশ খানিকটা পথ দৌঁড়ে দারুণ এক ডাইভিং ক্যাচ ধরেন মিচেল। শুরুতেই অধিনায়ক ফিরে গেলে খানিক আড়ষ্ট ছিলেন ওয়ার্নার। তবে অপরপ্রান্তে তাকে চাপমুক্ত রাখেন মিচেল মার্শ। অ্যাডাম মিলনের করা চতুর্থ ওভারের প্রথম তিন বলেই দুইটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান মার্শ। প্রথম পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়া করে ৪৩ রান। এরপর হাত খুলে খেলতে শুরু করেন ওয়ার্নারও। বিশেষ করে ইশ সোধির করা নবম ওভারে হাঁকান দুই চার ও একটি বিশাল ছক্কা। যার সুবাদে প্রথম ছয় ওভারে ৪৩ রান করা অস্ট্রেলিয়া পরের চার ওভারেই পেয়ে যায় আরও ৩৯ রান। জুটি দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাননি ওয়ার্নার ও মার্শ। দুজন মিলে তান্ডব চালাতে থাকেন কিউই বোলারদের ওপর। উইকেটের আশায় ১১তম ওভারে জিমি নিশামকে আনেন কিউই অধিনায়ক। সেই ওভারে একটি করে ছক্কা হাঁকান ওয়ার্নার ও মার্শ। নিশামকে হাঁকানো ছক্কায় ব্যক্তিগত ফিফটি পূরণ হয় ওয়ার্নারের। প্রথম ১৮ বলে মাত্র ১৮ রান করা ওয়ার্নার ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৩৪ বলে। পরের ১৬ বল থেকে তিনি করেন ৩৩ রান। মিচেল স্যান্টনারের করা পরের ওভারে পূরণ হয় অস্ট্রেলিয়ার দলীয় শতক। তবে ওয়ার্নারকে বেশি দূর যেতে দেননি বোল্ট। ইনিংসের ১৩তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসে দ্বিতীয় বলেই বোল্ড করে দেন ওয়ার্নারকে। আউট হওয়ার আগে চার চার ও তিন ছয়ের মারে ৩৭ বলে ৫৩ রান করেন ওয়ার্নার। তার বিদায়ে ভাঙে ৯২ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। তাতেও অবশ্য কোনো সমস্যা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। কেননা তৃতীয় উইকেট জুটিতেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চালু রাখেন মার্শ ও গ্লেন ম্যাঙওয়েল। ইনিংসের ১৩ থেকে ১৭ ওভারের মধ্যে ৫০ রান নেন এ দুজন। যা অস্ট্রেলিয়ার জয় এক প্রকার নিশ্চিতই করে দেয়। ১৮তম ওভারে মিলনে দারুণ বোলিং করেন। যার বলে বাড়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের অপেক্ষা। পরে সাউদির করা ১৯তম ওভারের প্রথম ও পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেয় তারা। ম্যাঙওয়েলের রিভার্স স্কুপে ফুরোয় দীর্ঘদিনের শিরোপার অপেক্ষা। ফাইনালের ম্যাচ সেরা হয়েছেন মিচেল মার্শ। টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার।
এর আগে দুবাইয়ে গতকাল টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিং করতে দেয় অস্ট্রেলিয়া। মাঠে নেমে ড্যারিল মিচেল ও মার্টিন গাপটিল মেরে খেলার চেষ্টায় ছিলেন। ৩ ওভারে ২৩ রান এলেও এই রানের গতি কমে যায় হ্যাজেলউড মিচেলকে সাজঘরে ফেরালে। তৃতীয় ওভারে আবার আক্রমণাত্মক গাপটিলকেও ফেরানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু ম্যাঙওয়েলের ঘূর্ণিতে তার ব্যাটে লাগা বল ম্যাথু ওয়েড নিতে পারেননি। জীবন পাওয়া গাপটিল অবশ্য ৩৫ বলে ২৮ রানের বেশি করতে পারেননি। ১১তম ওভারে কিউই ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসনকে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ ছিল। তখন কিউই অধিনায়ক ব্যাট করছিলেন ২০ রানে। কিন্তু স্টার্কের বলে ফাইন লেগে তার ক্যাচ ফেলে দেন জশ হ্যাজেলউড। দ্বিতীয় জীবন পাওয়া উইলিয়ামসন পুরো ইনিংসে কর্তৃত্ব করেছেন তারপর। অজি বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে ১৩তম ওভারে পূরণ করেন ৩২বলের হাফসেঞ্চুরি। তাও আবার ম্যাঙওয়েলকে দুই ছক্কা মেরে। সঙ্গী গ্লেন ফিলিপস ১৭ বলে ১৮ রানের বেশি অবদান রাখতে পারেননি। কিন্তু ফাইনালে জ্বলে উঠা কিউই অধিনায়কই রান-চাকা এগিয়ে নেওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৮তম ওভারে রান বাড়ানোর তাড়ায় উইলিয়ামসন ফিরলে সেই স্বপ্নের এখানেই ইতি। শেষ দিকে নিশামের ৭ বলে ১৩ ও সেইফার্টের ৬ বলে ৮ রানে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে করেছে ১৭২ রান। ৪৮ বলে সর্বোচ্চ ৮৫ রানের ইনিংস খেলা কেনের ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও ৩টি ছয়। অষ্ট্রেলিয়ান বোলারদের মধ্যে ১৬ রানে ৩ উইকেট নেন জশ হ্যাজেলউড। ২৬ রানে একটি অ্যাডাম জাম্পার।