ঘুষ প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

রূপম চক্রবর্ত্তী | বুধবার , ৩ নভেম্বর, ২০২১ at ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

আমার খুব ছোট বয়স থেকেই ঘুষ শব্দটির কথা শুনে আসছি। অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে ঘুষ রীতি চলছে। ইদানীং কেউ কেউ তো স্লোগান দিচ্ছে উঠতে ঘুষ, বসতে ঘুষ, খেতে ঘুষ, পড়তে ঘুষ, চলতে ঘুষ। ঘুষ প্রদান বিচারালয়ে যেমন হয়ে থাকে, তেমনি হয়ে থাকে প্রশাসনিক অফিস আদালতে। কারণ অপরাধীচক্র নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য কিংবা স্বীয় স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে অন্যের ন্যায্য অধিকার বানচাল করার জন্য কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান করে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে নিজেদের অবৈধ স্বার্থ অর্জনের জন্যও তারা ঘুষ প্রদান করে থাকে। জনশ্রুতি আছে ঘুষ না দিলে অনেক সময় টেবিলের ফাইলটাও নড়ে না। বাড়তি উৎকোচে জটিল কাজও সহজে হয়। আবার না দিলে সহজ কাজও জটিল হয়। এই ঘুষ প্রথা সচরাচর হওয়ার ফলেই অনেক যুবক ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে আগ্রহী । অনেক সরকারি অফিসেই ঘুষ ছাড়া নড়ে না ফাইল। দারোয়ান থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ অনেকেই ঘুষের সঙ্গে জড়িত। এই ঘুষের খপ্পর থেকে বাদ যায়নি সমাজে খেটে খাওয়া মানুষগুলোও। যে যেভাবে পারছে সে সেভাবেই কামাচ্ছে। এমনকি বড় স্যারের সঙ্গে দেখা করতে ও গুণতে হয় ঘুষ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি। আমার বাবা প্রাইমারি শিক্ষক ছিলেন। বাবার থেকে শুনতাম বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজের জন্য তাকে শিক্ষা অফিসের কর্মচারীদের ঘুষ দিতে হতো। এখন প্রায় শোনা যায় ভাল স্কুলে নাকি ভর্তি করাতে প্রয়োজন ঘুষ। তবে দুদকের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের ফলে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ঘুষ বাণিজ্য আগের থেকে কিছু কমেছে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ঘুষ নামক এ মরণব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করুক প্রত্যাশা। ঘুষের রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। ঘুষ না দিলে মেলে না চাকরি। ঘুষ নিয়ে মাতামাতি, হাতাহাতি, কাড়াকাড়ি সব কিছুই হচ্ছে কখনো গোপনে আবার কখনো প্রকাশ্যে। ভিক্ষুকের মতো সবার আগে ভদ্রবেশি ঘুষখোর হাত পেতে বসে থাকেন। ঘুষ দিয়ে কেউ কেউ রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ ঘুষ দিতে গিয়ে নিজের শেষ সম্বলটুকু হারাতে বসেছে। চাহিদা থাকবে, আকাঙ্ক্ষাও থাকবে এর বেশি আশা করলেই লোভ। সেখান থেকেই শুরু হয় ঘুষ খাওয়া। ভাল লোক যে নাই তা নয়। ধর্মীয় এবং মানবিক মূল্যবোধ এর কারণে কেউ ফিরে থাকে। ঘুষ সমাজের বড় ব্যধি। ঘুষের মাধ্যমে দেশে অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, এর মাধ্যমে চরিত্রের নীচতা ও হীনতা কঠিনভাবে প্রকাশ হয়। ঘুষে লিপ্ত ব্যক্তির ইজ্জত-সম্মান বলতে কিছু থাকে না। বড় পদের অফিসার হওয়ার পরও তাকে কেউ ভয় পায় না। এই ঘুষের কারণে মেধার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। তাই দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করে ঘুষ প্রথা থেকে সবাইকে বের হয়ে যেতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিন দ্বীপ আমাদের সম্পদ এটি রক্ষার দায়িত্বও আমাদের
পরবর্তী নিবন্ধভাবলেই শিহরিত হই