চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিল টুর্নামেন্টের টপ ফেবারিট ভারত। মাঝখানে আট দিনের লম্বা বিশ্রাম। ধারণা করা হয়েছিল এই সময়ে হয়তো আইপএলের ক্লান্তি ভুলে আবার নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে বিরাট কোহলির দল। কিন্তু সেটা আর হল না। হল উল্টোটা। বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনের ভারত নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করল হতশ্রী ব্যাটিং। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫১ রান করলেও গতকাল ১১০ রান করতে সমর্থ হয় রোহিত, কোহলি, রাহুল, ইশান, কিশানরা। হতশ্রী ব্যাটিংয়ের ভারতের বোলিংও ছিল একেবারে এলোমেলো। বুমরাহ, শামি, শার্দুল ঠাকুরদের গলির বোলারে পরিণত করলেন গাপটিল, মিচেল, উইলিয়ামসরা। ফলে পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। পাকিস্তানের পর হারতে হলো নিউ জিল্যান্ডের কাছেও। অথচ গতকালের ম্যাচটি অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল ভারত এবং নিউ জিল্যান্ড দু’দলের জন্যই। সে কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে সেমিফাইনালের আশা জিইয়ে রাখল নিউ জিল্যান্ড। পাকিস্তানের কাছে হারের পর ভারতের বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৮ উইকেটের জয়ে। অপরদিকে আরো একটি হতাশার পরাজয়ে সেমিফাইনালের পথটা কঠিন হয়ে গেল ভারতের জন্য। যদিও এখনো শেষ হয়ে যায়নি সম্ভাবনা। তবে এই গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালের দাবিদার এখন তিন দল। ভারত, নিউ জিল্যান্ড এবং আফগানিস্তান। যদিও আফগানিস্তান দুই জয়ে রয়েছে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। তারাও হেরেছে পাকিস্তানের কাছে। যদিও আফগানদের এখনো খেলা বাকি ভারত এবং নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। তাই গ্রুপটিতে সেমিফাইনালের লড়াইটা বেশ ভালই জমে উঠেছে। যদিও তিন দলের হিসেব নিকেষের মারপ্যাচে বেশ পিছিয়ে ভারত। কারণ গতকাল জয়ের সাথে নেট রান রেটও বেশ বাড়িয়ে নিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত চলা আইপিএলে এই উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রানের ফুলঝুড়ি ছড়ালেও বিশ্বকাপে এসে যেন অচেনা হয়ে গেছে এই উইকেট। দুই ম্যাচের কোনটিতে ব্যাটে-বলে প্রতিপক্ষের উপর আদিপত্য বিস্তার করতে পারেনি ভারত। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতা নিউ জিল্যান্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখল ভারতের উপর। আর হতাশ করল ফেভারিট ভারত।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ভারত তাদের উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনেছিল। লোকেশ রাহুলের সাথে ইশান কিশানকে পাঠিয়েছিল ইনিংস শুরু করতে। কিন্তু সফল হল না এইজুটি। তৃতীয় ওভারেই ১১ রানে ভাঙল জুটি। ফিরলেন প্রথমবারের মত সুযোগ পাওয়া ইশান কিশান। নিয়মিত ওপেনার রোহিত শর্মাকে পাঠানো হয়েছিল ওয়ানডাউনে। ২৪ ওভারের জুটি গড়েন রোহিত এবং রাহুল। টিম সাউদি ফেরালেন ১৬ বলে ১৮ রান করা রাহুলকে। দলের সবচাইতে বড় ভরসা রোহিত এবং কোহলি তখন উইকেটে। ভারতের আশা এ জুটি দলকে বড় স্কোরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু পারলেন না কোহলি। পারলেন না রোহিতও। ইশ শোধির পরপর দুই ওভারে ফিরেন ভারতের সেরা এই দুই ব্যাটসম্যান। রোহিত ১৪ বলে ১৪ রান করলেও কোহলি পারেননি দুই অংকের ঘরে যেতে। ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর হার্দিক পান্ডিয়া এবং রিশভ পান্ত চেষ্টা করছিলেন রানের চাকা ঘুরানোর। কিন্তু সে আশাও গুড়ে বালি। ২২ রানের বেশি আসল না এ জুটিতে। মিলনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরলেন ১৯ বলে ১২ রান করা রিশভ পান্ত। হার্দিক পান্ডিয়ার সাথে রবীন্দ্র জাদেজার জুটিটাও জমল না। ২৪ রান যোগ হলো এ জুটিতে। এবার ট্রেন্ট বোল্টের আঘাত। গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ২৪ বলে ২৩ রান করা হার্দিক। মাত্র একটি চার মেরেছেন তিনি। একই ওভারে শার্দুল ঠাকুরকেও ফেরান বোল্ট। রবীন্দ্র জাদেজা দলের মান কিছুটা হলেও বাঁচিয়েছেন। ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার জাদেজার ব্যাট থেকে ১৯ বলে ২৬ রান না আসলে হয়তো শতরানের নিচেই থামতে হতো ভারতকে। যদিও শেষ পর্যন্ত ১১০ রান করতে সক্ষম হয় ভারত। নিউ জিল্যান্ডের পক্ষে তিনটি উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। ২টি উইকেট নিয়েছেন ইশ শোধি।
১১১ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভাল শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মার্টিন গাপটিল। কিন্তু ২৪ রানে ভাঙল উদ্বোধনী জুটি। ১৭ বলে ২০ রান করে বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন গাপটিল। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নেন ড্যারিল মিচেল। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরিটা পাওয়া হল না এই ওপেনারের। বুমরাহর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন মিচেল। ৩৫ বলে ৪টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৪৯ রানের ইনিংসটি থামে লংঅনে রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ৫৪ বলে ৭২ রান যোগ করেন উইলিয়ামসন এবং মিচেল দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে। বাকি কাজটা সেরে নিতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের। ৩৩ বল এবং ৮ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউ জিল্যান্ড। ৩১ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ৩৩ রানে অপরাজিত উইলিয়ামসন। ভারতের পক্ষে উইকেট দুটি নিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ।