অবশেষে নতুন নিয়োগকৃত ঠিকাদারের মাধ্যমে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশখাল রোডের উন্নয়ন এবং গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এবার আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে চায় চসিক। এর আগে প্রকল্পটির ঠিকাদার কাজ শেষ না করে আট কোটি টাকা অগ্রিম হাতিয়ে পালিয়েছিল। চলতি বছরের শুরুতে ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে জাইকা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘কনস্ট্রাকশন অব রিটেইনিং ওয়াল অন বুথ সাইড অব মহেশখাল ইন ওয়ার্ড ২৬ অ্যান্ড ইম্প্রুভমেন্ট অব রোড বাই আরসিসি’ শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার ১৯০ টাকায় মঈনুদ্দীন বাঁশীকে ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল চসিক। তখন প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে চার দফা মেয়াদ বাড়ালেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ শেষ হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। মাঝখানে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অন্য একটি প্রকল্প থেকে ৮ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করে চসিক। এ বিষয়ে চসিককে অডিট আপত্তিও দেয়া হয়। আপত্তিতে বলা হয়, সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং ব্রিজসমূহের উন্নয়নসহ আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সড়ক আলোকায়ন শীর্ষক প্রকল্পের সরকারি বরাদ্দ হতে নিয়মবর্হিভূতভাবে আট কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, অগ্রিম টাকা পেয়ে কাজ না করেই পালিয়ে যায় ঠিকাদার মঈনুদ্দীন বাঁশী। চলতি বছরের শুরুতে চসিক প্রশাসক থাকাকালে খোরশেদ আলম সুজন তার কার্যাদেশ বাতিল করার উদ্যোগ নেন। সর্বশেষ মার্চ মাসে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। এছাড়া ওই ঠিকাদারকে তিন কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পরবর্তীতে প্রায় ১৭ কোটি টাকায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ওই ঠিকাদার কাজ শুরু করে।
২০১৭ সালে ঠিকাদারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত চুক্তি অনুযায়ী, মহেশ খালের আর্টিলারি সেন্টারের পূর্ব-উত্তর কর্নার বিদ্যমান অংশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ৫ হাজার ৩শ ফুট পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করার কথা। এছাড়া ৩টি ব্রিজ, খালের স্লোপ রক্ষায় ব্লক দেয়ার কথা। খালের ২ পাশে ১৮ ফুট দীর্ঘ আরসিসি রাস্তা নির্মাণ এবং খালের দুই পাড়ের রাস্তায় সৌন্দর্যবর্ধনও প্রকল্পভুক্ত। পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদার রিটেইনিং ওয়ালের বেশ কিছু কাজ শেষ করেছে। অবশ্য এখানো বাকি আছে ৩০০ ফুট। এদিকে নতুন করে নিয়োগ দেয়া ঠিকদারের মাধ্যমে সড়কের প্রশস্ত আগের চেয়ে বাড়িয়ে ২৬ ফুট করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আগের ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় তার কার্যাদেশ বাতিল করে রি-টেন্ডার করা হয়। নতুন নিয়োগকৃত ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাবে।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদারকে জরিমানা করা হয়। তার ব্যাংক জামানত থেকেও অর্থ কেটে রাখা হয়। পরবর্তী এলজিইডি প্রকল্পটির অবশিষ্ট কাজের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে। এ প্রকৌশলী বলেন, নতুন নিয়োগ দেয়া ঠিকাদারের মাধ্যমে চলমান কাজ আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে আমরা কাজ শেষ করে ফেলব। কারণ এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে দাতা সংস্থা জাইকা আর টাকা দিবে না।
এদিকে গতকাল চলমান কাজ পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি প্রকল্পের কাজের মান ঠিক রেখে দ্রুত সময়ে শেষ করার নির্দেশ দেন।