চট্টগ্রাম মহানগরীর জেএমসেন হল কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে হামলার চেষ্টার পর চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের অনুরোধে সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সন্ধ্যার পর থেকে জেএমসেন হলের প্রতিমাসহ নগরীর ১৬ থানার পূজা মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় এবং রাতের মধ্যে প্রায় প্রতিমা বিসর্জন শেষ হয়। এদিকে পূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত আজ শনিবার চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে একদল লোক জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় তারা ঢিল ছুড়ে এবং পূজার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্র ভঙ্গ করে দেয়।
হামলাকারীরা এ সময় জেএম সেন হলের পাশ দিয়ে এবং চেরাগী পাহাড় দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ নগরীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের পূজার্থীরা জেএমসেন হলের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। সড়কে বসে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রতি বছর জেএমসেন হলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ দুর্গাপূজার আয়োজন করে থাকে। মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের এমন সিদ্ধান্তের পর নগরীর প্রতিটি পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রতিমা বিসর্জন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনার পরপর চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য জানান, প্রতি বছর আমরা ১১টা থেকে বিসর্জনের কাজ শুরু করি। এবার সরকারি নির্দেশনা ছিল জুমার নামাজের জন্য বেলা আড়াইটা থেকে পূজা মণ্ডপ থেকে বিসর্জনের জন্য বের হওয়ার। আমরা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় মণ্ডপে হামলা হয়েছে। মণ্ডপে যেখানে হামলা হচ্ছে -সেখানে সড়কে যে হামলা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সরকার আগে নিরাপত্তার কথা বলুক, তারপর আমরা প্রতিমা বিসর্জনে যাব। তার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরের কোনো
মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার ঘোষণা এলে তখন বিবেচনা করা হবে।
এদিকে জেএমসেন হলে হামলার পর পূজা কমিটির নেতা-কর্মীরা সড়কে এসে অবস্থান নিলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ৩টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জেএমসেন হলের মোড়ে এসে পূজা উদযাপন পরিষদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
জেএমসেন হল মোড়ে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আজ শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, কেউ এ কর্মসূচি প্রতিহত করতে চাইলে বুকের রক্তের বিনিময়ে হলেও প্রতিরোধ করা হবে।
এদিকে খবর পেয়ে সিএমপি পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিকালে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সাথে কথা বলেন। প্রতিমা বিসর্জনে সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির পর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা প্রতিমা বিসর্জনে সম্মত হন। এই ব্যাপারে গতকাল রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য আজাদীকে জানান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিএমপি পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, সাবেক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন-যারা প্রকৃত দোষী, যারা হামলা করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এই পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে আরো যারা জড়িত তাদেরকেও গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরপর আমরা প্রতিমা বিসর্জন শুরু করেছি। নগরীর ১৬ থানার সব পূজা কমিটিকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বলে দেয়া হয়েছে। রাতের মধ্যে সব প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেছে। আমরা মহানগর পূজা কমিটি জেএমসেন হলের প্রতিমা ফিরিঙ্গী বাজারস্থ কর্ণফুলী নদীর বাঁশঘাটা এলাকায় বিসর্জন দিয়েছি। অনেকে পতেঙ্গা, ফিরিঙ্গী বাজারস্থ বাঁশঘাটা, নেভাল-২, গঙ্গাবাড়ি এলাকা এবং কালুরঘাট এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে। এদিকে এনায়েত বাজার এলাকার বেশ কয়েকটি প্রতিমা এবং চেরাগী পাহাড় পূজা মণ্ডপের প্রতিমা এনায়েত বাজার পুকুরে বিসর্জন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজাপুকুর লেন মোমিন রোড পূজা কমিটির সভাপতি রাজীব চৌধুরী মিল্টন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগরে ২৭৭টি মণ্ডপে এ বছর দুর্গা পূজা উদযাপন হয়েছে।