বিজয়া দশমীর দিনে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল করে কয়েকশ লোক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। অন্যদিকে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে কয়েকটি পূজামণ্ডপ এবং বাড়িঘরে দফায় দফায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ঢাকায় ‘মালিবাগ মুসলিম সমাজ’ ব্যানার নিয়ে কয়েকশ লোক বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছে পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা দুই ভাগ হয়ে যায়। তাদের একটি অংশ বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ তখন বিভিন্ন গলির মুখে অবস্থান নেয় এবং টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। পুলিশ সেখান থেকে একজনকে ধরে রমনা থানায় নিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, বিক্ষোভ মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেখানে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই সংঘর্ষের সময় গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। কাকরাইল ও বিজয়নগরের বিভিন্ন গলিতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। প্রধান সড়কে পুলিশের এপিসি ও জলকামানের গাড়িও দেখা যায়। খবর বিডিনিউজের।
এদিকে নোয়াখালী পুলিশ জানিয়েছে, হামলা-ভাংচুরের সময় এক ব্যক্তি ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে’ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৮ জন। ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে পুলিশ পরে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বলে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ ইমরান জানান।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর মণ্ডপগুলোতে যখন বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে, তখনই হামলার শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর চলে।
শাহ ইমরান বলেন, ‘এ সময় চৌমুহনী কলেজ রোডের বিজয়া পূজামণ্ডপে অগ্নিসংযোগ ও হিন্দুদের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। যতন সাহা নামে ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি সে সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।’
যতন সাহা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মনোরঞ্জন সাহার ছেলে। তিনি পূজা উপলক্ষে চৌমুহনীতে এক আত্মীয়র বাড়িতে এসেছিলেন।
বেগমগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস জানান, পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম, বেগমগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান শিকদার, পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ আহত ১৮ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সদর হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে তাদের হাসপতালে আনা হয়েছে।
যতন সাহাকে তাদের হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় বলে জানান চিকিৎসক আজিম। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
জেলার ডিসি খোরশেদ আলম বলেন, পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে চৌমুহনীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কাল সকাল-সন্ধ্যা চৌমুহনী বাজারে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।