কিশোর কুমার। কিংবদন্তী গায়ক। গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং রেকর্ড প্রযোজক হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত।
কিশোর কুমার ৪ আগস্ট ১৯২৯ সালে মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়াতে এক মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মগত নাম আভাষ কুমার গঙ্গোপাধ্যায় হলেও বম্বে টকিজে দাদা অশোক কুমারের সঙ্গে প্রথম কোরাস গাওয়ার সময় নিজের নাম আভাস থেকে কিশোর করে নেন তিনি। তার বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলী ছিলেন একজন উকিল। তার মার নাম ছিল গৌরী দেবী।
কিশোরের শৈশবকালীন সময়েই তার বড়দা অশোক কুমার ছিলেন হিন্দি চলচ্চিত্রে একজন জনপ্রিয় অভিনেতা, মেজদা অনুপ কমারও অভিনয়ের সাথে জড়িত ছিলেন। ফলে কিশোর বয়সেই তাঁর ফিল্ম জগৎতের উপর আগ্রহ জন্মে। সংগীত বিষেয়ে তার কোনো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না। তাঁর অসাধারণ কণ্ঠ মাধুর্য গায়কী ঢঙের কারণে তিনি হয়ে ওঠেন বরেণ্য। তার ভাইদ্বয়ের সফলতা ছোট্ট কিশোরের উপরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। ছোটবেলা থেকেই কিশোর অভিনয় থেকে গানের প্রতি তাঁর ঝোঁকটা বেশি ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি কুন্দন লাল সায়গলের নকল করে গাইতেন। পরে শচীন দেব বর্মনের পরামর্শে তিনি নিজের গাইবার কায়দা পাল্টান এবং এমন এক গাইবার কায়দা উদ্ভাবন করেন যা সেই সময়ের অপর প্রধান দুই গায়ক মহম্মদ রফি এবং মুকেশের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর গানের বৈশিষ্ট্য ছিল গলাকে ভেঙে গান গাওয়া যা আগে কখনও শোনা যায়নি। ভক্তদের মাঝে এই নতুন ধারার গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত কমেডি নায়ক হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তিনি মোট চারটি ছবিতে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনয়ের কায়দা ছিল অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সেই সময়ের প্রবল জনপ্রিয় এবং ক্ষমতাশালী তিন নায়ক-রাজ কাপুর, দেব আনন্দ এবং দিলীপ কুমার বলিউড শাসন করা সত্ত্বেও কিশোর কুমার নিজের এক পৃথক জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হন। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে তিনি ছিলেন এক প্রবল ব্যস্ত, সফল নায়ক এবং গায়ক। এছাড়াও তিনি সুরকার, গীতিকার এবং প্রযোজকের ভূমিকাও পালন করেন।
সংগীত জীবনে তিনি প্রায় ২০০০ গান গেয়েছেন। এর মধ্যে তিনি মোট আটবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৩ অক্টোবর ১৯৮৭ সালে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে এই কিংবদন্তী গায়ক কিশোর কুমার মৃত্যুবরণ করেন।