লাইটারেজ জাহাজের সংকট

রেশনিং করে বরাদ্দ, বহির্নোঙরে বাড়ছে জাহাজের অবস্থানকাল আমদানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়ার শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

লাইটারেজ জাহাজের সংকট দেখা দিয়েছে। গত তিন দিন ধরে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনের বড় এই খাতে রেশনিং করে জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কোনো মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাসের জন্য পাঁচটি লাইটারেজ জাহাজের আবেদন করে পাওয়া যাচ্ছে একটি বা দুটি। এতে করে বহির্নোঙরে অলস জাহাজের সংখ্যা এবং জাহাজের অবস্থানকাল বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতি লাগাতার হলে আমদানি বাণিজ্যে সংকট তৈরি হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমদানিকারকদের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে প্রায় দেড় হাজার লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজের স্বাভাবিক চলাচলের ওপর বহির্নোঙরসহ দেশের পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ক পুরোপুরি নির্ভর করে। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়ও বেশ কিছু লাইটারেজ রয়েছে। ওগুলো নিজেদের মতো চলাচল করে। এর বাইরে সাধারণ আমদানিকারকদের পণ্য পরিবহনের ব্যাপারটি ডব্লিউটিসির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ডব্লিউটিসি প্রতিদিন বার্থিং সভা করে আমদানিকারকদের চাহিদার বিপরীতে লাইটারেজ বরাদ্দ দেয়। লাইটারেজের সংকটের মুখে গত তিন দিন ধরে ডব্লিউটিসি জাহাজ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে রেশনিং করছে। অর্থাৎ কোনো মাদার ভ্যাসেল পাঁচটি লাইটারেজের চাহিদাপত্র দিয়ে একটি বা দুটি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বহির্নোঙরে অলস জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। কোনো কোনো মাদার ভ্যাসেলে সীমিত পরিসরে কাজ হওয়ায় জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে। একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন বসে থাকলে বিশ-ত্রিশ হাজার ডলার ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ লোকসান দিতে হয়। একটু বড় জাহাজ হলে এই খরচ বেড়ে যায়। এখন আমদানির মৌসুম। এ সময় পাথর ও কয়লা আমদানি বেড়ে যায়। এতে করে লাইটারেজ জাহাজের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় একটু বেশি থাকে। কিন্তু বর্তমানে লাইটারেজের সংকট দেখা দেয়ায় আমদানি খাত সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টরের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডব্লিউটিসি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে। প্রায় তিন মাস এই সংস্থার কোনো কার্যক্রম ছিল না বললেই চলে। ওই সময় বিপুল সংখ্যক লাইটারেজ চট্টগ্রামের পরিবর্তে ভারতের সাথে চলাচল শুরু করে। আবার অনেকগুলো লাইটারেজ চট্টগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে চলে যায়। এই অবস্থায় চট্টগ্রামে লাইটারেজ জাহাজের সংখ্যা কমে যায়। এর ফলে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
একজন শিল্পপতি নাম প্রকাশ না করে বলেন, আগে আমাদের জাহাজ দিয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পরিবহন করতাম। ডব্লিউটিসি ভাড়া কমিয়ে আমাদের নানাভাবে অনুরোধ করে সব জাহাজ তাদের সিরিয়ালে নিয়ে গেল। এখন আমরা চাহিদা অনুযায়ী লাইটারেজ জাহাজ পাচ্ছি না। আমাদের একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন বেশি থাকতে হলে ৩৫ হাজার ডলার বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এটি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় বোঝা।
পুরো ব্যাপারটির পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন আমদানিকারক বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এই খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। নানাভাবে জিম্মি করা হয়েছে দেশের আমদানি খাতকে। আবার কোনো চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। পরিস্থিতি খারাপ। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে আমদানি বাণিজ্য জিম্মি হয়ে পড়বে।
ডব্লিউটিসির প্রধান নির্বাহী মাহবুব রশিদ বলেন, অনেকগুলো জাহাজ পণ্য নিয়ে ভাসমান গুদাম হয়ে রয়েছে। আমদানিকারকেরা সময়মতো জাহাজ খালি করছেন না। এতে করে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। আবার আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। এটিও সংকটের একটি কারণ। প্রতিদিন একশর কাছাকাছি লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ হচ্ছে। সময়মতো পণ্য খালাস করে জাহাজগুলো খালি করে দেওয়া হলে সংকটের সমাধান হবে। সংকট কাটানোর জন্য ডব্লিউটিসি সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি
পরবর্তী নিবন্ধগৃহবধূর মরদেহে আঘাতের চিহ্ন