স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক আর নেই। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। গতকাল দুপুরে হঠাৎ করে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ড. ইনামুল হক। পরে ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
১৯৪৩ সালে ফেনী সদরের মটবী এলাকায় জন্ম নেন ড. ইনামুল হক। দাম্পত্য সঙ্গী নাট্যজন লাকী ইনাম। তাদের সংসারে দুই মেয়ে হৃদি হক ও প্রৈতি হক। নাট্যজগতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে ড. ইনামুল হক একুশে পদক লাভ করেন। ২০১৭ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে সরকার।
ড. ইনামুল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ড. ইনামুল হকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে তিনি অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি লাভ করেন ড. ইনামুল হক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকার সময় ১৫ বছর রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং দুই বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দুর্দান্ত অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গল্পের নাটক লিখে গেছেন ড. ইনামুল হক। টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক লিখেছিলেন তিনি। তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’। নাট্যকার হিসেবে ড. ইনামুল হকের পথচলা শুরু ১৯৬৮ সালে। তার প্রথম লেখা নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’ বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রচারিত হয়। নাটকটির প্রযোজনায় ছিলেন আরেক বর্ষীয়ান কিংবদন্তি আবদুল্লাহ আল মামুন। মঞ্চের জন্য প্রথম নাটক লেখা নাটকের নাম ‘বিবাহ উৎসব’। এটি লিখেছিলেন উদীচীর জন্যে। তার নিজ দল নাগরিক নাট্যাঙ্গনের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘গৃহবাসী’। মঞ্চ ও টেলিভিশনে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন ড. ইনামুল হক। নটরডেম কলেজে পড়াকালীন ড. ইনামুল হক প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তার প্রথম নাটক ‘ভাড়াটে চাই’। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসে নাগরিক নাট্যসমপ্রদায়ের যাত্রা শুরু হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠিতা সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক মোস্তফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’।