অস্ত্র মামলায় কারাগারে থাকলেও শপথ গ্রহণে তেমন জটিলতা হবে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) চকবাজার ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী নূর মোস্তফা টিনুর। আইন অনুযায়ী, টিনুর কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। ওই গেজেট প্রকাশের ত্রিশ দিনের মধ্যে তাকে শপথ বাক্য পাঠের বাধ্যবাধকতা আছে। অবশ্য কারাগারে থাকায় নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ করতে পারবে কীনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তবে নিয়ম মেনে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করার সুযোগ আছে তার। মুক্তি পেলে ভার্চুয়ালি শপথ বাক্য পাঠ করতে পারবেন তিনি। অর্থাৎ কারাগারে থাকলেও শপথ পাঠের সুযোগ রয়েছে। জামিন না পেলে শপথ গ্রহণের জন্য প্যারোলে মুক্তির জন্য সরাসরি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী অথবা জেলারের মাধ্যমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অথবা সিটি মেয়র বরাবর আবেদন করা যাবে। আবেদনের পর মন্ত্রী সম্মতি দিলে মন্ত্রণালয় থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্যারোলে মুক্তির জন্য চিঠি দেয়া হবে। যদি মেয়র অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন সেটাও মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সাধারণত প্যারোলে মুক্তি কয়েক ঘন্টার জন্য দেয়া হয়। সেক্ষত্রে ঢাকায় গিয়ে শপথ গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। তাই ভার্চুয়ালি শপথবাক্য পাঠ করাবেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। জামিন হয়ে গেলে ঢাকায় গিয়ে সরাসরি শপথ বাক্য পাঠ করবেন।
গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় চকবাজার ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচন। এতে কারাবন্দী টিনু মাত্র ৭৮৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। যদিও নির্বাচনের ৩ মাস ১৬ দিন আগে থেকে কারাগারে আছেন তিনি। ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নগরের কাপাসগোলার বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭। তার বাসা থেকে একটি শটগানও ৬৭ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় টিনু ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে পাঁচলাইশ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করে র্যাব। এ মামলায় গত ২৩ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পায় টিনু। এরপর ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষ টিনু জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের আপিল বিভাগে পিটিশন দায়ের করেন। শুনানি শেষে ২৩ মে জামিন বাতিল করে টিনুকে বিচারিক আদালতে ১৪ দিনের মধ্যে আত্মসর্মপণ করতে বলা হয়। পরে ২০ জুন আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এখানো কারাগারে আছেন তিনি। ইতোমধ্যে অস্ত্র মামলায় টিনুকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য আছে। বর্তমানে এ অস্ত্র মামলায় কারাগারে আছেন তিনি। এছাড়া ১৬ জুন দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় টিনুসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় জামিন হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনের এখনো গেজেট প্রকাশ হয়নি। গেজেট প্রকাশের বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এ বলা আছে, ‘মেয়র এবং কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত সকল ব্যক্তির নাম নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন যথাশীঘ্রই সম্ভব সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে’।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গেজেট প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পাঠিয়ে দিয়েছি। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করবে। সেটা একমাসও হতে পারে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, গেজেট প্রকাশের ত্রিশ দিনের মধ্যে শপথ নিতে হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে শপথ পাঠ করাবেন মন্ত্রী মহোদয়। তবে প্রার্থী যদি জেলে থাকেন তাহলে তিনি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন পেলে আমরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার জন্য বলে থাকি। এরপর যদি দুই-তিন ঘন্টা বা ছয় ঘন্টার জন্যও মুক্তি পান তাহলে ভার্চুয়ালি তাকে শপথ পাঠ করানো যাবে।
তিনি বলেন, প্রার্থী চাইলে জেলারের মাধ্যমেও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দরখাস্ত করতে পারেন। তখন ডিসি সেটা আমাদের কাছে ফরোয়ার্ড করে দিবেন। এরপর মন্ত্রী মহোদয় যদি রাজি হন আমরা প্যারোলে মুক্তি দেয়ার জন্য চিঠি দিয়ে দিব। সেক্ষেত্রে তাকে ডিসি অফিসে নিয়ে এসে ভার্চুয়ালি শপথ পাঠ করানো যাবে। প্রার্থী চাইলে মেয়র বরাবরও দরখাস্ত করতে পারেন। তখন মেয়র আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিলে আমরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিব। তবে অবশ্যই গেজেট প্রকাশের ত্রিশ দিনের মধ্যে করতে হবে।
টিনু অস্ত্র মামলার আইনজীবী মো. জাফর ইকবাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কিছু বলা হয়নি। পরিবারের সম্মতি পেলে জামনের জন্য আবেদন করবো। তাছাড়া প্যারোলে মুক্তির সুযোগ আছে। সেজন্যও আবেদন করতে পারি।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল চসিক নির্বাচন। তখন দুই হাজার ৭৫৫ ভোট পেয়ে চকবাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু। তিনি মারা যাওয়ায় গত বৃহষ্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় উপ-নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিজয়ী নূর মোস্তফা টিনুর অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। ‘কিশোর গ্যাং লিডার’ তকমাও আছে তার বিরুদ্ধে। যুবলীগের কোনো পদে না থাকলেও নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া ও পাঁচলাইশ এলাকায় ‘কিশোর অপরাধী চক্র’র নেতা টিনু’।