হালিশহরে গৃহায়ণের প্রকল্পে জিকে শামীম কানেকশন!

তিন বছর মেয়াদ শেষ হলেও ছয় ভবনের তিনটি এখনো পাইলিং পর্যায়ে, ১৪ তলার এসব ভবনের দুটি উঠেছে মাত্র চার তলা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

হালিশহরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দুইশ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই। ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রকল্পটির। মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের ৬টি ১৪ তলার ভবনের মধ্যে মাত্র দুইটি চতুর্থ তলা পর্যন্ত ঢালাই হয়েছে। একটি ভবনের বেইজমেন্ট ঢালাই হলেও অন্য তিনটি ভবনের এখনো পাইলিংও শুরু হয়নি। তিন বছরে পুরো প্রকল্পের ২৮ শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। সীমিত আয়ের লোকদের জন্য আবাসিক প্রকল্পটিতেও রয়েছে দেশের আলোচিত গণপূর্তের ঠিকাদার জিকে শামীম কানেকশন। জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবিপিএল (জিকে বিল্ডার্স প্রা.লিমিটেড) এবং কম্প্রিহেনসিভ গ্রুপের সিএইচএল ৯ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
(কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিং লিমিটেড) জয়েন্টবেঞ্চারে দুইশ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মঈনুল হক মোতাইদ নিজ কার্যালয়ে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘হালিশহর জি ব্লকে ৬টি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কিছু জমি নিয়ে সরকারি একটি বাহিনীর সাথে পুরনো জটিলতা ছিল। এসব জটিলতা শেষ করে পুরো জমি বুঝিয়ে দিতে কিছু সময়ক্ষেপণ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণেও প্রকল্পের কাজ স্থিমিত ছিল।’
সরেজমিন দেখা গেছে, হালিশহর জি ব্লকে প্রবেশের মুখে গৃহায়নের প্লটের সামনের অংশে দুইটি ভবনের চার তলার ছাদ ঢালাই অবস্থায় রয়েছে। পেছনে একটি ভবনের বেইজমেন্ট ঢালাই হলেও পানিতে বেইজ ঢালাইয়ের লোহাগুলো দাঁড়িয়ে আছে। ঝং ধরেছে এসব লোহায়। পাশে পাইলিংয়ের জন্য জমানো লম্বা আরসিসি খুঁটিগুলো পড়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলোচিত জিকে শামীমের ঠিকাদারি প্রকল্পটিতে ৬টি ১৪ তলা ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে। তন্মধ্যে মাত্র ওই দুইটি ভবনের চার তলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। আরসিসি খুঁটিগুলো তিনটি ভবনের পাইলিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, “চট্টগ্রামস্থ হালিশহর হাউজিং এস্টেটের জি ব্লকে সীমিত আয়ের লোকজনের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাটের নির্মাণ প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় জি ব্লকে ২ দশমিক ২৩ একর জায়গায় ৬টি ভবন নির্মিত হচ্ছে। এতে ১৩৬৫ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট ৫২টি ফ্ল্যাট থাকছে প্রত্যেক ভবনে। পুরো প্রকল্পে ৩১২টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। প্রকল্পের ঠিকাদারি ব্যয় চুক্তি রয়েছে ১৯৭ কোটি ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের ২ আগস্ট প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ৩৬ মাস মেয়াদের এ প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মেয়াদ শেষ হলেও সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্তের ঠিকাদারি মানেই ক্যাসিনো কান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগের আলোচিত সেই কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। আর জি কে শামীমের হাত ঢাকা থেকে শুরু করে পুরো দেশে বিস্তৃত। বন্দর নগরীতে হাজার কোটি টাকার প্রায় এক ডজন প্রকল্পে রয়েছে জিকে শামীমের সংশ্লিষ্টতা। তন্মধ্যে হালিশহরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুইশ কোটি টাকার প্রকল্পটি অন্যতম।
এর আগে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার নিকেতনের জিকে বিল্ডার্সের অফিস থেকে নগদ ১ কোটি ৮০ টাকা ও ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিঙড ডিপোজিট রেট) উদ্ধার ও ৭ দেহরক্ষীসহ জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই জি কে শামীম আটক হয় বলে ওইসময় র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। জি কে শামীম গণপূর্তের সরকারি টেন্ডারগুলো বাগিয়ে নিতেন। এ জন্য মোটা অংকের ঘুষও দিতেন তিনি। মূলত রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের বালিশ কাণ্ড থেকেই আলোচনায় আসে গণপূর্তের এই টেন্ডার মাফিয়া।
প্রকল্প কাজের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শাহ মো. মাসুদ ইব্রাহিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘হালিশহরের ভবনগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা নেই। এসব তথ্য চিফ ইঞ্জিনিয়ার ভালো বলতে পারবেন।’ তিনি এ বিষয়ে তথ্য জানতে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন। প্রকল্পে জিকে শামীম কানেকশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কাজে জিকে শামীম কেউ নন। কম্প্রিহেনসিভই পুরো কাজ করছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউচ্চ আদালতে যাচ্ছে নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন
পরবর্তী নিবন্ধটিনুর শপথ নিতে জটিলতা নেই