সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার পঞ্চম দফার ২য় দিনে দুই সেনা সদস্যসহ আরো ৫ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সোমবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে মামলার ২৭তম স্বাক্ষী সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট জিয়াউর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় এবং দুপুর সোয়া দুইটায় পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম আজ দুপুরে আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের জানান, সিনহা হত্যা মামলায় আজ সোমবার পাঁচজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে যাদের মধ্যে দুইজন সেনা সদস্য, একজন পুলিশ কন্সটেবল এবং দুইজন জেলা সদর হাসপাতালের কর্মচারী (ডোম)।
তিনি জানান, এ নিয়ে পঞ্চম দফার দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত আদালত এ মামলার ৩১ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। মামলায় মোট ৮৩ জন স্বাক্ষী রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণের আগে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে মামলার ১৫ আসামীকে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফায় টানা তিন দিনে মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছিল।
এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় টানা চার দিনে আরো চারজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামীপক্ষের আইনজীবীদের জেরা সম্পন্ন হয়।
তারপর ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় দফায় টানা ৩ দিনে আরো আটজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ জুলাই ঈদুল আযহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়ার এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলীতে খুন হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনার ৫ দিন পর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামী এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ আলোচিত মামলার ১৫ আসামী হলো টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, তার দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কন্সটেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কন্সটেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কন্সটেবল মো. রাজীব, মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার স্বাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গত ২৭ জুন ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/ ১১৪/১২০-খ/ ৩৪ ধারায় ১৫ আসামীর বিরুদ্ধে মামলাটির বিচারের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়।