বছর ঘুরে আবার প্রাণের হিল্লোল জাগাতে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। পাঁচ দিনের দুর্গা পূজাকে ঘিরে আনন্দে মেতেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের মধ্যে লেগেছে প্রাণের ছোঁয়া। প্রায় সব মন্দির-মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছেন আয়োজকরা। কোথাও কোথাও ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি নতুনত্ব আনার প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো।
প্রতিমা, প্যান্ডেল, সাজসজ্জা কিংবা অন্যান্য আয়োজনে ব্যতিক্রমের ছোঁয়াও রয়েছে। সব মিলিয়ে পূজার আয়োজনে এখন মুখর চট্টগ্রাম নগরী। নগরীর ২৭৭টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর এসব মণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিএমপি কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। সিএমপি কমিশনার বলেন, পূজার শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পূজার আমেজকে সমপ্রীতি ও আনন্দ উৎসবে পরিণত করতে হবে। কোনো অপরাধীকে সুযোগ দেব না। দুই একটি বিশেষায়িত পূজামণ্ডপ ছাড়া নির্দিষ্ট ফোর্স রাখা হবে না। মোবাইল টহল টিমের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
দুর্গোৎসব উদযাপনে সিএমপির পক্ষ থেকে ৩৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১. পূজা মণ্ডপসমূহের প্রবেশ মুখে পুরুষ ও নারীর জন্য পৃথক ভাবে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মাল স্ক্যানার রাখতে হবে। ২. পূজামণ্ডপে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। ৩. মণ্ডপের চারদিকে বা উপরের অংশ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ৪. মণ্ডপের ভেতরে অধিক লোক অবস্থান নিরুৎসাহিত করতে হবে। ৫. প্রসাদ তৈরি ও বিতরণ সীমিত পর্যায়ে করা। ৬. প্রতিমা তৈরির সময় নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা। ৭. মণ্ডপের প্রবেশ মুখে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা এবং দর্শণার্থী আগমনে নিরুৎসাহিত করা। ৮. সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড করা। ৯. জরুরি সেবা দানকারীদের ফোন ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করা। ১০. বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর প্রস্তুত রাখা। ১১. বিদ্যুতের ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ দ্রুত মেরামত করা। ১২. সার্বক্ষনিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান নিয়োগ করা। ১৩. নিরাপদ স্থানে পূজা মণ্ডপ স্থাপন করা। ১৪. মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা। ১৫ ফায়ার এক্সটিংগুইসারের ব্যবস্থা করা। ১৬. পানির ব্যবস্থা করা। ১৭. পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরি সেবার নম্বরসমূহ দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। ১৮. মন্দির বা পূজামণ্ডপে কোন প্রকার থিম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ডিজে পার্টি না করা। ১৯. পূজা কমিটি নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব থাকলে নিজেরা অথবা মহানগর পূজা কমিটির সাথে আলোচনা করে মীমাংসা করা। ২০. অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি থেকে সতর্ক থাকা। অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া কোন কিছু খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকা। ২১. নামাজ ও আযানের সময় সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ রাখা। ২২. নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যতিত যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করা। ২৩. নারীরা যেন ইভটিজিংয়ের শিকার না হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ২৪. পূজা মণ্ডপে আগত মহিলাদের উত্যক্ত/ইভটিজিং প্রতিরোধ করা। ২৫. পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক প্রবেশ ও নির্গমন পথ তৈরি করা। ২৬. মহিলা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা। ২৭. পূজা মণ্ডপের ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক সার্বক্ষণিক নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা। ২৮. স্বেচ্ছাসেবকদের চেনার সুবিধার্থে গেঞ্জি/ক্যাপ/আর্মডব্যান্ড ব্যবহার করা। ২৯. স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জের নিকট প্রেরণ করা। ৩০. ঘটনার সংবাদ দ্রুততার সাথে আইন-শৃক্সখলা বাহিনীকে অবহিত করা। ৩১. মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। ৩২. পূজা মণ্ডপের আশেপাশে মেলা বা জুয়ার আসর না বসানো। ৩৩. কোন ধরনের আতশবাজি বা পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকা। ৩৪. যে কোনো ধরনের গুজব বা অনাকাক্সিক্ষত বিষয়ে নিকটস্থ থানা বা পুলিশকে অবহিত করা।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) শামসুল আলম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) আমির জাফরসহ অন্যান্য উপ-পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, সহকারি পুলিশ কমিশনার, অফিসার ইনচার্জ, র্যাাব, এপিবিএন, এনএসআই, ডিজিএফআই, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপির প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম মহানগরীর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার ও সেক্রেটারি শ্রী প্রকাশ দাশসহ সকল থানার পূজা উদযাপন কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।












