ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত

উখিয়া ও টেকনাফ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা এবং শিক্ষক মুহিবুল্লাহকে (৫০) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় ক্যাম্পের ডি-৭ ব্লকে তার উপর গুলিবর্ষণ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উখিয়ার কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তায় থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. নাঈম-উল হক। এই রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ নামে পরিচিত ছিলেন। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে ওয়াশিংটন গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন তিনি। কারা এই রোহিঙ্গা নেতাকে খুন করেছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। পুলিশ কর্মকর্তা নাঈম বলেন, রাতে ক্যাম্পের ডি-৭ ব্লকের নিজ কার্যালয়ের পাশে এক দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন মুহিবুল্লাহ। এক পর্যায়ে মুখে গামছা পরিহিত একদল অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত অতর্কিত তাকে লক্ষ্য করে পর পর পাঁচটি গুলি ছোড়ে। তার শরীরে তিনটি গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। নাঈম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে এপিবিএনের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মুহিবুল্লাহকে উদ্ধার করে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করে।
৮-এবিপিএন এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন জানিয়েছেন, এশার নামাজের পর নিজ অফিসে অবস্থানকালে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা ৫ রাউন্ড গুলি করলে তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে মুহিবুল্লাহ বেশ আগে বাংলাদেশে আসেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে কঙবাজারে রোহিঙ্গাদের যে সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা উঠেছিল, তার উদ্যোক্তা ছিলেন মুহিবুল্লাহ। রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে মুহিবুল্লাহর সম্পর্কও স্থানীয়দের মধ্যে আলোচিত ছিল। ইংরেজি জানার সুবাদে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা চালাতেন।
একটি সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নয়, মাতৃভূমি মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে ফিরতে চাই রোহিঙ্গারা- এমন দাবি করে গত ৯ আগস্ট একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস।’ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে একীভূত করার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত হয়ে কঙবাজারে বসবাসকারী রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন। এই বিবৃতিই কী কাল হয়ে দাঁড়াল মুহিবুল্লাহর জন্য- এখন এমন সব বার্তাই আলোচিত হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
এদিকে মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর রাতেই ক্যাম্পে উত্তেজিত রোহিঙ্গারা মিছিল করে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব এপিবিএন সদস্যসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে জানান ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) মো. নাইমুল হক। তিনি জানান, দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আগেই নববধূর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধসমন্বয়ে বাধা কোথায়?